নব্য ভারতীয় আর্য ভাষার লক্ষণগুলো সংক্ষেপে আলোচনা কর
নব্য ভারতীয় আর্য ভাষান্তরের বিভিন্ন ভাষার উৎপত্তি প্রসঙ্গে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ধারণা, দারদি (Dardic) ভাষাগুলাে ছাড়া সমস্ত আধুনিক ভারতীয় আর্য ভাষার উৎপত্তি একটি সাধারণ প্রাচীন ভারতীয় আর্য কথ্য ভাষা থেকে। তিনি এ মূল ভাষার নাম দিয়েছেন ‘আদিম প্রাকৃত’। ভারতবর্ষের সর্বত্র ‘আদিম প্রাকৃত’ নামের প্রাচীন সাধারণ কথ্য ভাষা চালু ছিল-এমন ধারণা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ করেন না। তার মতে, নিশ্চয়ই এ ভাষার প্রাদেশিক রূপ ছিল । হয়তাে একই প্রদেশে আর্যদের জন্য ‘আর্য’ এবং অন্যদের জন্য সামাজিক উপভাষা (Dialect) ভেদ ছিল। তবে এটা নিশ্চিত যে, পশ্চিমে সিদ্ধি থেকে পূর্বে আসামি ভাষা এবং উত্তরে কাশ্মিরি থেকে দক্ষিণে মারাঠি কিংবা সিংহলি ও মালদ্বীপি ভাষা পর্যন্ত, এমনকি অন্য দেশের যাযাবরদের জিপসি ভাষা পর্যন্ত সমস্ত ভাষার মূল এক সাধারণ প্রাচীন ভারতীয় আর্য কথ্য ভাষা যা ‘আদিম প্রাকৃত’ নামে পরিচিত। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় যাযাবরদের জিপসি ভাষাগুলােকে উদীচ্য শাখার বলে মনে করেন।
নব্য ভারতীয় আর্য ভাষার বিশিষ্ট সাধারণ লক্ষণ প্রধানত ছয়টি-
১. যুগাধ্বনির একটি ধ্বনি হওয়ার দিকে অনিবার্য ঝোঁক এবং এর ফলে অক্ষরে মাত্রা সমতা রক্ষার জন্য পূর্ববর্তী হ্রস্বস্বরের দীর্ঘতাপ্রাপ্তি ।
২. পদের ভেতর শ্রুতিধ্বনির ব্যবধান না থাকলে সন্নিকৃষ্ট স্বরধ্বনির সন্ধি প্রবণতা বা সংশ্লেষ (Contraction) ।
৩. লুপ্ত প্রাচীন বিভক্তির স্থানে নতুন বিভক্তির প্রচলন এবং বিভক্তি স্থানীয় বিভিন্ন শব্দের (অনুসর্গ) ব্যবহার। নতুন করে স্ত্রীলিঙ্গ সৃষ্টি। ক্লিবলিঙ্গের ব্যবহার হ্রাস ও লােপ প্রবণতা।
৪. ‘নিষ্ঠা’ প্রত্যয় ও ‘শতৃ’ প্রত্যয় জাত বিশেষণ পদ থেকে অতীত ও ভবিষ্যৎ কালের ক্রিয়াপদ সৃষ্টি, যৌগিক কালের ব্যবহার, প্রাচীন কাল-ভাবের ভিতর শুধু বর্তমান (দৈবাৎ ভবিষ্যৎ) এবং অনুজ্ঞা থাকে।
৫. বাক্যরীতি সিদ্ধ প্রয়ােগ অনুযায়ী এবং পদ প্রয়ােগ সংস্থানগত। যেমন- ছেলেটি ভাল (বাক্য) ; ভাল ছেলেটি (বিশেষণ-বিশেষ্যময় বাক্যাংশ)। প্রথম উদাহরণে ‘ভালো’ শেষে বসে বিধেয় বিশেষণরূপে বাক্য সম্পূর্ণ করেছে। দ্বিতীয় উদাহরণে ‘ভালো’ বিশেষ্যের পূর্বে বসেছে বলে সাধারণ বিশেষণ ।
৬. ছন্দের পদ্ধতি সমমাত্রিক ও মাত্রামূলক এবং কোথাও কোথাও অক্ষরমূলক।
Pingback: বাংলা ভাষার ইতিহাস ও ব্যবহারিক বাংলা সাজেসন্স | Cholo Shekhe