বাক্য শুদ্ধিকরণ

Spread the love

বাক্য শুদ্ধিকরণ

আমরা যখন বাক্য লিখি তখন বাক্যের মধ্যে নানা রকমের ভুল হতে পারে। ভুল বাক্য মনের ভাব প্রকাশে সমর্থ হয় না। বাক্য লেখার সময় কিছু বিষয়ে সচেতন থাকলে বাক্য শুদ্ধভাবে লেখা যায়। যেসব বিষয়ে ভুল হতে পারে-

১. বাক্যে ব্যবহৃত পদের বানান ভুল হতে পারে।
২. বিশেষ উক্তি ব্যবহারে ভুল হতে পারে।
৩. যতি চিহ্নের ব্যবহার করায় ভুল হতে পারে।
৪. বাগধারার বিকৃত প্রয়োগে বাক্য ভুল হয়।
৫. সাধু রীতি ও চলিত রীতির মিশ্রণে বাক্যে ভুল হয়।
৬.বাক্যে বহুবচন একাধিকবার ব্যবহার করায় ভুল হয়।
৭. লিঙ্গ ঘটিত ভুল হতে পারে।
৮.পুরুষ বিন্যাস সঠিক না হওয়ায় ভুল হয়।
৯. ক্রিয়াপদ পুরুষ ও কাল অনুসারে না হলে ভুল হয়।
১০. বিভক্তির সঠিক ব্যবহার না করায় ভুল হতে পারে।
১১. অনুসর্গের সঠিক ব্যবহারের অভাবে ভুল হয়।
১২. অব্যয় পদের যথার্থ প্রয়োগ ভুল হতে পারে।
১৩. অসমাপিকা ক্রিয়ার অপপ্রয়োগে ভুল হয়।
১৪. পদ বিন্যাস সঠিক না হলে ভুল হয়।
১৫. পদের বাহুল্য প্রয়োগে ভুল হয়।
১৬. একই বাক্যে একাধিক বিষয়ের ভুল থাকতে পারে।

উপরে নির্দেশিত ভুল হওয়ার বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি রেখে বাক্য লিখলে বাংলা ভাষা শুদ্ধ করে লেখা যাবে। উদাহরণ-

বাক্যে ব্যবহৃত পদের বানান ভুল হতে পারে:

১. অশুদ্ধ: অপরাহ্ন লিখতে সবাই ভূল করে।
শুদ্ধ: অপরাহ্ণ লিখতে সবাই ভুল করে।

২. অশুদ্ধ: অতি লোভে তাঁতী নষ্ট।
শুদ্ধ: অতি লোভে তাঁতি নষ্ট।

৩. অশুদ্ধ: আপনি স্বপরিবারে আমন্ত্রিত।
শুদ্ধ: আপনি সপরিবারে আমন্ত্রিত।

বিভক্তির উপযুক্ত ব্যবহার না ঘটলে বাক্য অশুদ্ধ হয়

১.অশুদ্ধ: বস্ত্রহীন বস্ত্র দাও।
শুদ্ধ: বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দাও।

২.অশুদ্ধ : দিনরাত পরিশ্রম ফলে তার শরীর ভেঙেছে।
শুদ্ধ: দিনরাত পরিশ্রমের ফলে তার শরীর ভেঙেছে।

৩. অশুদ্ধ : ভর দুপুর একটু ঘুমাই।
শুদ্ধ: ভর দুপুরে একটু ঘুমাই।

৪. অশুদ্ধ: “আমার সন্তান যেন থাকে দুধভাতে।”
শুদ্ধ: “আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে।”

বাক্যে অতিশায়নের ভুল থাকলে বাক্য অশুদ্ধ হয় –

১. অশুদ্ধ: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুদ্রতম।
শুদ্ধ : ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছােটো।

২. অশুদ্ধ : হিমালয় পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বৃহত্তর পর্বত।
শুদ্ধ: হিমালয় পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা উচ্চ পর্বত।

৩. অশুদ্ধ: বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর।
শুদ্ধ: বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

বাক্যে উপযুক্ত স্থানে সঠিক অব্যয় ব্যবহৃত না হলে বাক্য ভুল হয়-

১. অশুদ্ধ: বৈশাখ এবং জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় এবং শ্রাবণ যথাক্রমে গ্রীষ্ম অথবা বর্ষাকাল।
শুদ্ধ: বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এবং আষাঢ় ও শ্রাবণ যথাক্রমে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল।

২. অশুদ্ধ : লোকটি দরিদ্র এবং সৎ।
শুদ্ধ: লোকটি দরিদ্র কিন্তু সৎ।

৩. অশুদ্ধ: ঝর্ণা এবং অসীমা একজন এলেই চলে।
শুদ্ধ: ঝর্ণা বা অসীমা একজন এলেই চলে।

বাক্যে বহুবচন একাধিকবার ব্যবহৃত হলে বাক্য অশুদ্ধ হয় –

১. অশুদ্ধ : নতুন নতুন ছেলেগুলাে বড় উৎপাত করে।
শুদ্ধ: নতুন ছেলেগুলো বড়ো উৎপাত করে।

২. অশুদ্ধ: কলেজের সকল ছাত্রগণ পাঠে মনোযোগী নয়।
শুদ্ধ: কলেজের সকল ছাত্র পাঠে মনোযোগী নয়।

৩. অশুদ্ধ: ছাত্রগণদের মধ্যে অনুপস্থিতির সংখ্যা কম।
শুদ্ধ: ছাত্রদের মধ্যে অনুপস্থিতির সংখ্যা কম।

লিঙ্গ অনুসারে শব্দের সঠিক ব্যবহার না হলে বাক্য অশুদ্ধ হয়-
১.অশুদ্ধ : তার কনিষ্ঠ মেয়েটি বেশ সরলা।
শুদ্ধ : তার কনিষ্ঠা মেয়েটি বেশ সরল।

২.অশুদ্ধ : সুন্দর মেয়েটি ভয়ে অস্থির হয়ে পড়ল।
শুদ্ধ: সুন্দরী মেয়েটি ভয়ে অস্থির হয়ে পড়ল।

৩.অশুদ্ধ : আজকালকার মেয়েরা যেমন মুখরা তেমনি বিদ্বানও বটে।
শুদ্ধ: আজকালকার মেয়েরা যেমন মুখরা তেমনি বিদুষীও বটে।

৪.অশুদ্ধ: হে ত্রিনয়নী, আমাকে রক্ষা করো।
শুদ্ধ: হে ত্রিনয়না, আমাকে রক্ষা করো।

৫.অশুদ্ধ : এ বাড়ির মেয়েরা যেমন শিক্ষিত তেমনি বুদ্ধিমান।
শুদ্ধ : এ বাড়ির মেয়েরা যেমন শিক্ষিতা তেমনি বুদ্ধিমতী

বাক্যে ব্যবহৃত পদের বাহুল্য প্রয়োগে বাক্য অশুদ্ধ হয় :

১. অশুদ্ধ : সে এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষী।
শুদ্ধ: সে এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ।

২. অশুদ্ধ : বেলালের ব্যবহারে মাধুর্যতা নেই।
শুদ্ধ: বেলালের ব্যবহারে মাধুর্য নেই।

৩.অশুদ্ধ: অনাবশ্যকীয় ব্যাপারে কৌতুহল ভালো নয়।
শুদ্ধ: অনাবশ্যক ব্যাপারে কৌতূহল ভালো নয়।

৪.অশুদ্ধ: সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ আমাদের একান্তভাবে কাম্য।
শুদ্ধ: সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমাদের একান্তই কাম্য।

বাক্যে পদের বিন্যাস সঠিক না হলে অর্থাৎ আসত্তি জনিত ভুল থাকলে বাক্য অশুদ্ধ হয় :

১. অশুদ্ধ : পাতায় পাতায় পড়ে শিশির নিশির।
শুদ্ধ : পাতায় পাতায় পড়ে নিশির শিশির।

২.অশুদ্ধ: আশা করি ভালো আছো তুমি।
শুদ্ধ: আশা করি তুমি ভালো আছো।

৩. অশুদ্ধ : হীন চরিত্র লোক পশ্বধম।
শুদ্ধ : চরিত্রহীন লোক পশ্বধম।

৪. অশুদ্ধ: তুমি, আবদুল করিম ও আমি আজ পড়তে যাব।
শুদ্ধ: আবদুল করিম, তুমি ও আমি আজ পড়তে যাব।

বহুল ব্যবহৃত বাগধারার বিকৃত ব্যবহারে বাক্য অশুদ্ধ হয় : 

১.অশুদ্ধ: আমি কারো সাতেও থাকি না সতেরোয় থাকি না।
শুদ্ধ: আমি কারো সাতেও থাকি না পাঁচেও থাকি না।

২.অশুদ্ধ: সারাজীবন ভূতের মজুরি খেটে মরলাম।
শুদ্ধ: সারাজীবন ভূতের বেগার খেটে মরলাম।

৩.অশুদ্ধ : একের লাঠি দশের বোঝা।
শুদ্ধ : দশের লাঠি একের বোঝা।

৪.অশুদ্ধ : যেমন বুনো কচু, তেমনি বাঘা বরই।
শুদ্ধ: যেমন বুনো ওল, তেমনি বাঘা তেঁতুল।

৫.অশুদ্ধ: দশ চক্রে ঈশ্বর ভূত।
শুদ্ধ: দশ চক্রে ভগবান ভূত।

বাক্যের মধ্যে বা শেষে যতি চিহ্ন যথাযথ ব্যবহৃত না হলে বাক্য অশুদ্ধ হয় : 

১. অশুদ্ধ: আমি সেখানে যাব না?
শুদ্ধ: আমি সেখানে যাব না।

২. অশুদ্ধ : বাহ? কী সুন্দর দৃশ্য?
শুদ্ধ : বাহ! কী সুন্দর দৃশ্য।

৩.অশুদ্ধ: তোমার নাম কী!
শুদ্ধ: তোমার নাম কী?

৪.অশুদ্ধ: তুমি কি সেখানে গিয়েছিলে।
শুদ্ধ: তুমি কি সেখানে গিয়েছিলে?

বাক্যে ব্যবহৃত পদের বাহুল্য প্রয়োগে বাক্য অশুদ্ধ হয় :

১. অশুদ্ধ : সে এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষী।
শুদ্ধ: সে এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ।

২. অশুদ্ধ : বেলালের ব্যবহারে মাধুর্যতা নেই।
শুদ্ধ: বেলালের ব্যবহারে মাধুর্য নেই।

৩.অশুদ্ধ: অনাবশ্যকীয় ব্যাপারে কৌতুহল ভালো নয়।
শুদ্ধ: অনাবশ্যক ব্যাপারে কৌতূহল ভালো নয়।

৪.অশুদ্ধ: সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ আমাদের একান্তভাবে কাম্য।
শুদ্ধ: সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমাদের একান্তই কাম্য।

বাক্যে পদের বিন্যাস সঠিক না হলে অর্থাৎ আসত্তি জনিত ভুল থাকলে বাক্য অশুদ্ধ হয় : 

১. অশুদ্ধ : পাতায় পাতায় পড়ে শিশির নিশির।
শুদ্ধ : পাতায় পাতায় পড়ে নিশির শিশির।

২.অশুদ্ধ: আশা করি ভালো আছো তুমি।
শুদ্ধ: আশা করি তুমি ভালো আছো।

৩. অশুদ্ধ : হীন চরিত্র লোক পশ্বধম।
শুদ্ধ : চরিত্রহীন লোক পশ্বধম।

৪. অশুদ্ধ: তুমি, আবদুল করিম ও আমি আজ পড়তে যাব।
শুদ্ধ: আবদুল করিম, তুমি ও আমি আজ পড়তে যাব।

বহুল ব্যবহৃত বাগধারার বিকৃত ব্যবহারে বাক্য অশুদ্ধ হয় :

১.অশুদ্ধ: আমি কারো সাতেও থাকি না সতেরোয় থাকি না।
শুদ্ধ: আমি কারো সাতেও থাকি না পাঁচেও থাকি না।

২.অশুদ্ধ: সারাজীবন ভূতের মজুরি খেটে মরলাম।
শুদ্ধ: সারাজীবন ভূতের বেগার খেটে মরলাম।

৩.অশুদ্ধ : একের লাঠি দশের বোঝা।
শুদ্ধ : দশের লাঠি একের বোঝা।

৪.অশুদ্ধ : যেমন বুনো কচু, তেমনি বাঘা বরই।
শুদ্ধ: যেমন বুনো ওল, তেমনি বাঘা তেঁতুল।

৫.অশুদ্ধ: দশ চক্রে ঈশ্বর ভূত।
শুদ্ধ: দশ চক্রে ভগবান ভূত।

বাক্যের মধ্যে বা শেষে যতি চিহ্ন যথাযথ ব্যবহৃত না হলে বাক্য অশুদ্ধ হয় : 

১. অশুদ্ধ: আমি সেখানে যাব না?
শুদ্ধ: আমি সেখানে যাব না।

২. অশুদ্ধ : বাহ? কী সুন্দর দৃশ্য?
শুদ্ধ : বাহ! কী সুন্দর দৃশ্য।

৩.অশুদ্ধ: তোমার নাম কী!
শুদ্ধ: তোমার নাম কী?

৪.অশুদ্ধ: তুমি কি সেখানে গিয়েছিলে।
শুদ্ধ: তুমি কি সেখানে গিয়েছিলে?

একই বাক্যে সাধু ও চলিত রীতির মিশ্রণে ভাষা অশুদ্ধ হয়:

১.অশুদ্ধ : কন্যার বাপ সবুর করিতে পারতেন।
শুদ্ধ: কন্যার বাপ সবুর করতে পারতেন।

.অশুদ্ধ: মেয়ের বয়স বাড়িয়া গেছে।
শুদ্ধ: মেয়ের বয়স বেড়ে গেছে।

৩.অশুদ্ধ : তাকে কলেজে যাইতে হবে।
শুদ্ধ : তাকে কলেজে যেতে হবে। (চলিত)
বা, তাহাকে কলেজে যাইতে হইবে। (সাধু) |

৪.অশুদ্ধ: এ বৎসর বর্ষার জল বৃদ্ধি হয়েছে।
শুদ্ধ: এ বৎসর বর্ষার জল বৃদ্ধি পেয়েছে।

.অশুদ্ধ: তাকে নির্দোষ প্রমাণ করিতে সকলেই উদগ্রীব।
শুদ্ধ: তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সকলেই উদগ্রীব।

৬.অশুদ্ধ : তাহারা বাড়ি যাচ্ছে।
শুদ্ধ: তারা বাড়ি যাচ্ছে।
বা, তাহার বাড়ি যাইতেছে।

বাক্যে যথার্থ শব্দ ব্যবহৃত না হলে বাক্য অশুদ্ধ হয় :

১. অশুদ্ধ : অপমান হবার ভয় নেই।
শুদ্ধ: অপমানিত হবার ভয় নেই।

২.অশুদ্ধ : নদীর জল হ্রাস হয়েছে।
শুদ্ধ : নদীর জল হ্রাস পেয়েছে।

৩.অশুদ্ধ : তিনি আরােগ্য হলেন।
শুদ্ধ : তিনি আরােগ্য লাভ করলেন।

৪.অশুদ্ধ : পরবর্তীতে আপনি আসবেন।
শুদ্ধ : পরবর্তীকালে আপনি আসবেন।

৫.অশুদ্ধ : গৌরব লােপ হয়েছে।
শুদ্ধ : গৌরব লোপ পেয়েছে।
অথবা, গৌরব লুপ্ত হয়েছে।

2 thoughts on “বাক্য শুদ্ধিকরণ”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top