মানব কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

Spread the love

                          মানব কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

                           বা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

                           বা আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান

ভূমিকা – বিজ্ঞান আধুনিক সভ্যতার আশীর্বাদ।  অন্ধকার জীবন থেকে মানুষকে আলোর পথে নিয়ে এসেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সেবা। প্রাচীন থেকে আধুনিক ধারার জীবন যাপনে মানুষকে দিনের-পর-দিন নতুনত্ব উপহার দিয়ে চলেছে বিজ্ঞান। প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞানের আবিষ্কার কোন না কোন ভাবে মানুষকে সহায়তা করছে ফলে মানুষের জীবন  সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে। বিজ্ঞান শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘বিশেষ জ্ঞান’। পার্থিব জগতের কল্যাণের জন্য বিশেষ জ্ঞান সৃষ্টি করায় বিজ্ঞানের অন্যতম লক্ষ্য। বিজ্ঞানের আবিষ্কার মানুষকে ক্রমবিবর্তনের মধ্য দিয়ে পৌঁছে দিয়েছে আধুনিক সভ্যতার চরম শিখরে।সারা পৃথিবীতে আজ বিজ্ঞানের জয়ধ্বনি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যতীত মানুষ এক মুহূর্ত বাঁচতে পারবে না। বিজ্ঞানের ছোঁয়া  যে দেশে পড়েনি সে দেশ কোনভাবেই উন্নতি লাভ করতে পারেনি। মানুষের জীবনে বিজ্ঞানের ছোঁয়া কতটা লেগেছে তা প্রতিদিনকার জীবনকে দেখলেই আমরা অনুভব করতে পারি।মানব কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত অবদান রেখে  চলেছে।

 

বিজ্ঞানের আবিষ্কার- বিজ্ঞানের বিচিত্র আবিষ্কার মানুষের জীবনে সুফল বয়ে এনেছে। মানুষের জীবনে পরিপূর্ণতা এনে দিয়েছে বিজ্ঞান। গুহাবাসী মানুষ আলোকিত জীবনের প্রথম ধাপে আবিষ্কার করেছিল  আগুন। বিজ্ঞানের  পদযাত্রা শুরু হয়েছিল আগুন জ্বালানোর মধ্য দিয়ে।এরপর মানুষের জীবনে যে আবিষ্কারটি গতি এনে দিয়েছে তা হল চাকা আবিষ্কার। পণ্য পরিবহন ও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে মানুষকে চাকা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এরপর থেকে মানুষকে আর থেমে থাকতে হয়নি আগুনে পুড়িয়ে  তৈরি হয়েছে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মানুষ  পৌঁছে গেছে চাকায়  চালিত বাহনের মাধ্যমে। সমাজের যত পরিবর্তন হয়েছে মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের  জিজ্ঞাসা ততই বেড়েছে। আকাশ, জল, স্থল  সম্পর্কে মানুষের কৌতূহল বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে আবিষ্কারের নেশা  মানুষকে তাড়িত করে। 

 

বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান- বিজ্ঞানের জয়যাত্রা প্রাচীনকাল থেকে শুরু হলেও বিংশ শতাব্দীতে এসে সমৃদ্ধি লাভ করেছে। বিজ্ঞানের আবিষ্কার মানুষের জীবনকে যেমন সহজ করেছে তেমনি প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কিছুটা সক্ষমতা তৈরি করেছে। বিজ্ঞানের বহুমুখী আবিষ্কার প্রাত্যহিক জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার মানুষ তার প্রয়োজন মত ব্যবহার করছে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা একবিংশ শতাব্দীতে অব্যাহত থাকবে এবং পৃথিবীকে  নিয়ে যাবে সমৃদ্ধির চরম শিখরে। বিজ্ঞানের বহুমুখী আবিষ্কার পৃথিবীকে দেখাবে নতুন দিগন্ত।বিংশ শতাব্দীতে আমরা উপলব্ধি করতে পারছি বিজ্ঞানের আবিষ্কার ছাড়া সমৃদ্ধি অর্জন কোনভাবেই সম্ভব না।

 

প্রযুক্তি আবিষ্কারে আত্মত্যাগ- প্রকৃতি জগতের বিচিত্র বিষয়ের প্রতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আগ্রহ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে নতুন নতুন কিছু আবিষ্কার করা বিজ্ঞানীদের মূল কাজ। বিভিন্ন রকম আবিষ্কার থেকে আমরা যে সুফল ভোগ করছি এর পেছনে প্রযুক্তি আবিষ্কারকদের রয়েছে নিরলস শ্রম, মেধা, অধ্যবসায়  ও সাধনা। নতুন নতুন জ্ঞান সমাজে পরিবেশন করা খুব সহজ কাজ ছিল না। নিজের আবিষ্কার সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে ব্রনো, ও ল্যাভয়িসকে। এছাড়া সক্রেটিস, গ্যালিলিও, আর্কিমিডিস, নিউটন, স্যার জগদীশচন্দ্র বসু  প্রভৃতি বিজ্ঞানী তাদের জীবনের বড় অংশ ব্যয় করেছেন গবেষণার কাজে। প্রযুক্তি আবিষ্কার এর পেছনের এই মহান মানুষগুলোর নিরলস পরিশ্রমের বিনিময়ে আধুনিক সভ্যতা বিচিত্র সুবিধা ভোগ করছে। প্রযুক্তি আবিষ্কারের প্রত্যক্ষ এই মানুষগুলোর প্রতি আমাদের সবসময় শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।

 

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান – প্রতিদিনকার জীবনে এমন কোনো মুহূর্ত নেই যে মুহূর্তে আমরা বিজ্ঞানের আশীর্বাদ গ্রহণ করছি না। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন ভাবে বিজ্ঞান আমাদের পাশে থাকে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় যে ঘড়িটা দেখি সেটি থেকে শুরু করে অফিস-আদালতের কাজ শেষ করে এসি বা ফ্যানের বাতাসে নিদ্রায় যাওয়া পর্যন্ত ছন্দময় জীবন এনে দিয়েছে বিজ্ঞান । যাতায়াত, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, কৃষি, চিকিৎসা, শিক্ষা ও প্রকৌশলীসহ নানামুখী কাজে বিজ্ঞান আমাদের পাশে রয়েছে। মানুষের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিজ্ঞান জড়িত। সমাজের প্রতিটি স্তরে বিজ্ঞান এর ছোঁয়া লেগেছে ফলে  জীবনে এসেছে পরিবর্তন। মানব জীবন এবং বিজ্ঞানকে আজ কোনভাবেই আলাদা করা যাবে না। প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান আমাদের প্রতিনিয়ত সুফল এনে দিচ্ছে।

 

বেকারত্ব মোচনে বিজ্ঞান – উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে বেকারত্ব অভিশাপ। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলে সমাজে অরাজকতা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। বিজ্ঞানের আবিষ্কার আজ বেকারত্ব  দূরীকরণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। হাতে-কলমে প্রযুক্তি সেবা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে  তরুণ সমাজ অর্থ উপার্জন করছে। রেডিও ,টেলিভিশন, বৈদ্যুতিক পাখা, কম্পিউটার, মোবাইল উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে যেমন শ্রম শক্তির প্রয়োজন হচ্ছে তেমনি ভাবে পরবর্তীতে মেরামতের জন্য আরেকটি শ্রমশক্তির প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে ।ইলেকট্রনিক বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং মেরামতের জন্য আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ করে দিয়ে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আয় করে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ দেশের আর্থিক খাতে বিরাট ভূমিকা পালন করছে। বড় বড় শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বেশি বেশি শ্রমিক লাগছে। মোবাইলে রিচার্জ বা  মোবাইল এর মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করে অর্থ উপার্জন করছে এবং তা দিয়ে একটি শ্রেণী তাদের জীবন জীবিকা বেশ ভালোভাবে নির্বাহ করছে। সর্বোপরি বিজ্ঞান বেকারত্ব দূর করার কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।

 

শিক্ষা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান-  শিক্ষা বিকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার।বিশেষ করে কাগজ-কলমের আবিষ্কার, মুদ্রণ শিল্পের অগ্রগতি, টাইপরাইটার আবিষ্কার যা শিক্ষার প্রসার ও বিকাশে সহায়তা করছে ।আধুনিক সময়ে কম্পিউটার আবিষ্কার হওয়ার পর শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে খুব সহজভাবে   পাঠ্যবইয়ের বিষয়সমূহ উপস্থাপন  করলে শিক্ষার্থীদের বুঝতে সুবিধা  হায়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইমেইল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশ কার্যকরী। শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে বিজ্ঞান সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য গবেষণা পত্র জমা দেওয়া বা ভর্তি পরীক্ষা  এখন অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা নেওয়া এবং বিচিত্র জ্ঞান আহরণের জন্য ইন্টারনেট প্রযুক্তির অধিক কার্যকর। পৃথিবীর যেকোন ভাষার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ আমরা সহজেই পড়তে পারি ইন্টারনেটের কল্যাণে। পৃথিবীর কোন জ্ঞান নির্দিষ্ট সমাজ বা দেশের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, জ্ঞান হয়ে উঠেছে সমগ্র পৃথিবীর। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার শিক্ষাক্ষেত্রকে  উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। 

 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান- জনস্বাস্থ্যের কল্যাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে বিজ্ঞান। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান আমরা তখনই বুঝতে পারে যখন আমি বা আমার পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়। এক্সে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, সিটি স্ক্যান প্রভৃতি আবিষ্কার রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করছে। অত্যাধুনিক আবিষ্কার জটিল রোগের  সহজ সমাধান এনেছে। বৃক্ক,  অস্থিমজ্জা, যকৃত এর মত শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মানুষ নতুন করে জীবন ফিরে পাচ্ছে। হৃদ রোগীদের জন্য রক্তের প্রবাহ ঠিক রাখতে রক্তনালীর মাঝে  রিং ব্যবহার করা হচ্ছে অথবা লেজার রশ্মির মাধ্যমে রক্তনালীর অভ্যন্তরের চর্বি সরিয়ে দিচ্ছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেমোথেরাপির বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। মূত্রথলি ও পিত্তকোষের পাথর অপসারণের জন্য লেজার রশ্মি ব্যবহার বর্তমান সময়ে বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। লেজারের মাধ্যমে শরীরের  অতি স্পর্শকাতর স্থানের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যাচ্ছে। বিজ্ঞানের আবিষ্কার ব্যতীত আজকের দিনের আধুনিক চিকিৎসা কোনভাবেই কল্পনা করা সম্ভব নয়। কম্পিউটার প্রযুক্তি চিকিৎসাবিজ্ঞানে অভূতপূর্ব পরিবর্তন  এনে দিয়েছে।

 

অর্থনীতিতে বিজ্ঞানের অবদান- অর্থনৈতিক ভিত্তি ব্যতীত আধুনিক পৃথিবীতে কোন দেশ উন্নতি করতে পারবে না। অর্থনৈতিক প্রবাহ যে দেশে যত বেশি গতিশীল থাকে সেই দেশের জীবনযাত্রার মান তত বেশি উন্নতি লাভ করবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান বিশেষভাবে গুরুত্ব বহন করে। শিল্প কলকারখানা, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, আধুনিক মানের যন্ত্রপাতি আবিষ্কার সহ আর্থিক খাতের সকল প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানের  ছোঁয়া লেগেছে। বিজ্ঞানের সুফল হিসেবে মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে যেমন তেমনি ভাবে আর্থিক প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে সর্বোপরি একটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে বিশেষ প্রভাব সৃষ্টি করছে।মানুষের মাথাপিছু আয় যত বেশি বৃদ্ধি পাবে তত বেশি সে দেশের সম্মান বহির্বিশ্বে বৃদ্ধি পাবে। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা সৃষ্টি করা বিজ্ঞানের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন নতুন আবিষ্কার অর্থনৈতিক প্রবাহে আর্থিক উৎসের নতুন নতুন পথ সংযুক্ত করছে। 

 

যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থায় বিজ্ঞান- যে দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যত নিরাপদ ও সহজ সেই দেশ তত দ্রুত উন্নতি করতে পারবে। বর্তমান পৃথিবীর  সমৃদ্ধি বহুলাংশে নির্ভর করে সে দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর।চাকা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিবর্তনের যে ধারা শুরু হয়েছিল তা বর্তমানে ব্যাপকতা লাভ করেছে। বুলেট ট্রেন, এরোপ্লেন, রকেট সহ বহু ধরনের দ্রুতগামী বাহন আবিষ্কৃত হয়েছে। নৌপথে পণ্য ও মানুষ পরিবহনের জন্য উন্নত মানের জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার ,স্পিড বোর্ড আবিষ্কৃত হয়েছে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য মোবাইল, টেলিফোন ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য বিনিময়ের জন্য ইমেইল সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম।গভীর সমুদ্র পথ পাড়ি দিতে পারে এমন বৃহদায়তনের উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন মালবাহী জাহাজ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চলে যাচ্ছে।  যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থায় বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। 

 

 ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বিজ্ঞান- মানুষ যেখানে পৌঁছাতে পারে না সেখানে মানুষের তৈরি প্রযুক্তি পৌঁছে যেতে পারে সহজেই। বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব আবিষ্কার রোবট। মহাশূন্যের রহস্য আবিষ্কারের জন্য রোবট সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম। দুর্গম পাহাড়-পর্বত, গভীর খনি, সমুদ্রের অতল গহীনে সহজে পৌঁছে যাচ্ছে রোবট। মানুষকে  চাঁদে নিয়ে  গেছে রকেট  আবার মঙ্গলে  পানির অস্তিত্ব খুঁজে পেতে বিজ্ঞান নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।মহাশূন্যের বিচিত্র অজানা তথ্য জানতে মানুষ বিজ্ঞানের শরণাপন্ন হচ্ছে।আকাশপথে ড্রোনের মাধ্যমে গোয়েন্দা তথ্য যেমন সংগ্রহ করা হচ্ছে তেমনি ভাবে মানুষের কাছে বার্তাও পাঠানো হচ্ছে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে। যেখানে মানুষের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে সেখানে এগিয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি।মানবকল্যাণে বিজ্ঞান সব সময় অবদান রেখে চলেছে।

 

বাণিজ্য বিকাশে বিজ্ঞানের অবদান- সাম্প্রতিক বিশ্বে বাণিজ্য বিকাশে সবথেকে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে বিজ্ঞান। এক দেশ থেকে অন্য দেশে  কাঁচামাল সরবরাহ করা যেমন সহজ হচ্ছে তেমনি ভাবে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে উৎপাদিত পণ্য পৌঁছে দেয়া যাচ্ছে। সমগ্র পৃথিবীটাই এখন একটি বাজারে পরিণত হয়েছে এবং এর একমাত্র কারণ বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার সমূহ। পৃথিবীর কোন অঞ্চলে কোন পণ্যের চাহিদা রয়েছে তা যেমন আমরা মুহূর্তের মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে জানতে পারি ঠিক তেমনি ভাবে  একটি পণ্য উৎপাদন করতে কত খরচ পড়বে তাও আমরা সহজে হিসাব করে ফেলতে পারি।বাণিজ্য বিকাশের আজকের যে সফলতার পেছনে বিজ্ঞানের  বড় অবদান রয়েছে।

 

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান- মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন জাতের  বীজ উৎপাদন করছে। এখন আর মাঠে আমরা লাঙ্গল গরু খুব একটা দেখি না আমরা দেখি  পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, ধান মাড়াই যন্ত্র। কৃষি কাজ সহজ করার জন্য আবিষ্কৃত হয়েছে বীজ রোপণ, ফসল আহরণ করার যন্ত্র। পানির জন্য প্রকৃতির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে।  পূর্বে যে জমিতে বছরে একটি মাত্র  সফল উৎপাদন হতো সেই জমিতে উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করার কারণে বছরে তিনটি ফসল উৎপাদিত হচ্ছে।  বিভিন্ন জাতের বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছ পুকুরে চাষ করার উপযোগী করার মাধ্যমে দেশে মাছের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। মাটি পরীক্ষার যন্ত্র ব্যবহার করে জমিতে প্রয়োজনীয় সার ব্যবহার করা হচ্ছে।প্রাকৃতিক  সারের সঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক সার।গবেষণার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে উন্নত জাতের বীজ, সার, চাষ পদ্ধতি, আবিষ্কৃত  হয়েছে  যা মূলত কৃষি বিপ্লবের ভিত্তি রচনা করেছে। মানব কল্যাণের জন্য বিজ্ঞান যেসব আবিষ্কার মানুষের জীবনকে বদলে দিয়েছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কৃষি সম্পর্কিত আবিষ্কার।

 

জীবনমান উন্নয়নে বিজ্ঞানের ব্যবহার- মানুষের অর্থনৈতিক প্রবাহ যদি যথাযথ থাকে তাহলে জীবন মানের উন্নয়ন ঘটে। অর্থনৈতিক প্রবাহ ঠিক রাখার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের অবদান অনস্বীকার্য। জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আবিষ্কার অভূতপূর্ব ভাবে কাজে লাগছে। আজ আমরা রেডিও টেলিভিশনের মাধ্যমে ঘরে বসেই বিনোদন লাভ করতে পারছি আবার প্রয়োজন মত অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য টেলিফোন, মোবাইল ব্যবহার করছি। বাণিজ্য ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে আমাদের জীবন মান উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে বিজ্ঞান প্রভাব ফেলছে।

 

আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে বিজ্ঞান – প্রকৃতির বিপক্ষে গিয়ে আমরা যতই অবস্থান নিচ্ছে ততই প্রকৃতি নিজের শক্তি-সামর্থ্য জানান দিতে ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস সহ বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি করছে। মানুষ  তার বুদ্ধি বিবেক ব্যবহার করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার জন্য প্রযুক্তি সহায়তা নিচ্ছে। বাতাসের গতিবেগ নির্ণয়, বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ নির্ণয়,ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস, জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা সহ বিভিন্ন রকম দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার আগাম সংবাদ আমরা বিজ্ঞানের কল্যাণে  পাচ্ছি ।বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয় তাই অতি বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যা, অথবা নিম্নচাপের ফলে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিজ্ঞান আমাদের সহায়তা করছে। উপগ্রহের মাধ্যমে আমরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে পারি।

 

 শিল্প ক্ষেত্রে বিজ্ঞান-  অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইউরোপে শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল মূলত বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে। ছোট শিল্প বা কুটির শিল্প একটি পণ্য উৎপাদন করতে যে সময় ও অর্থ ব্যয় করে বৃহৎ শিল্প তার থেকে কম মূল্যে পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে। শিল্পক্ষেত্রে যে পরিবর্তন তার পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানের আশীর্বাদ। অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন ওয়েবসাইটে উৎপাদিত পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদানের মাধ্যমে ক্রেতা সংগ্রহ করা সহজ হয়েছে। আধুনিক সময়ে শিল্পের প্রসারে বিজ্ঞানের বিস্ময় আবিষ্কার বহুমুখী। উৎপাদন থেকে শুরু করে ক্রেতা পর্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া যেমন সহজ তেমনি ভাবে পণ্যের চাহিদা যাচাই করারও সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের জন্য যে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় তার বৃহৎ অংশ পাওয়া যায় খনিতে আর  খনির অনুসন্ধান কাজ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার।

 

সভ্যতা বিকাশে বিজ্ঞানের অবদান- মানব সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান ছাড়া কখনোই আমরা আজকের এই আধুনিক বিশ্বে উপস্থিত হতে পারতাম না। জ্ঞান বিজ্ঞানের বিকাশ, যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব পরিবর্তন, মানুষের চিন্তা চেতনার বিশালতা, সভ্য জীবনে পদার্পণ এ সকল কিছুর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞান। সর্বোপরি সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান  সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল কাজেই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিজ্ঞানের উপর আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে।

 

বিজ্ঞানের ক্ষতিকর দিক –  বিজ্ঞানের সাফল্যের দিক যেমন রয়েছে তেমনি তার একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে যা আমরা অস্বীকার করতে পারি না।পৃথিবীতে আজ বড় বড় যুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে ভারি ভারি অস্ত্র যেমন বোমারু বিমান, পারমানবিক বোমা, ডিনামাইট, এটম বোমা, ট্যাংক, কামান সহ বিভিন্ন গোলাবারুদ যা আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ, আফগানিস্তান, সিরিয়ার যুদ্ধ যার মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতা দেখলো বিজ্ঞানের ভয়াবহ রূপ।হিরোশিমা ও নাগাসাকির মানুষ আজও যুদ্ধের ভয়াবহতা বহন করে যাচ্ছে।

 

উপসংহার- বিজ্ঞানের কিছু আবিষ্কার মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হলেও বৃহত্তর অর্থে বিজ্ঞান মানুষকে দেখিয়েছে শান্তি এবং সমৃদ্ধির পথ। বিজ্ঞানকে যদি আমরা শুভ কাজে ব্যবহার করতে পারি তাহলে বিজ্ঞান হবে আমাদের কাছে শতভাগ আশীর্বাদ আর যদি খারাপ কাজে ব্যবহার করি তাহলে আমাদের জন্য হবে অভিশাপ। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান ছাড়া আমরা কোন ভাবে সমৃদ্ধির পথে এগোতে পারি না। সর্বোপরি বিজ্ঞানের বিচিত্র আবিষ্কার মানুষের জীবনে  কল্যাণ বয়ে নিয়ে এসেছে।

2 thoughts on “মানব কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top