কলেজে প্রথম দিনের অনুভূতি ব্যক্ত করে একটি দিনলিপি লেখ।

Spread the love

কলেজে প্রথম দিনের অনুভূতি ব্যক্ত করে একটি দিনলিপি লেখ।

                                                                                                                                  [দিনাজপুর বোর্ড-২০১৯; ২০১৬]

১ জুলাই, ২০২২, সোমবার

রাত ১১ টা, ঢাকা।

আজ ছিল আমার কলেজ জীবনের প্রথম দিন। ছোটবেলা থেকেই এ দিনটি নিয়ে অনেক স্বপ্ন আর প্রত্যাশা ছিল। বড় ভাই বোনরা যখন কলেজে যেত তখন আমারও কলেজে যাবার খুব ইচ্ছে হতো। শুধু মনে হতো আমিও একদিন কলেজে পড়ব, যেখানে স্কুলের মতো এত কড়াকড়ি থাকবে না, অবাধ স্বাধীনতা উপভোগ করব। আজ আমার জীবনের বহুকাঙ্ক্ষিত সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

রাত পোহালেই আমি কলেজে যাব, এ উত্তেজনায় গতকাল রাতে ঠিকমতো ঘুমোতে পারিনি। শুধু মনে হয়েছে, না জানি কলেজের পরিবেশ কেমন, শিক্ষকরা কী রকম আচরণ করবেন, নতুন পরিবেশে কীভাবে সময় কাটাব, অন্যান্য শিক্ষার্থীরা কেমন ইত্যাদি। খুব সকালেই ঘুম থেকে ওঠে পড়ি। একটু হাঁটাহাঁটি করে বাসায় এসে গোসল করি। সকাল নয়টায় কলেজে উপস্থিত থাকতে হবে। তাই আটটার দিকে নাস্তার করে কলেজ ড্রেস পরে কলেজের উদ্দেশে রওয়ানা হই। কিন্তু স্টেশনে গিয়ে বাস-লেগুনা কিছুই পাচ্ছিলাম না। সময়মতো কলেজে উপস্থিত হতে পারব কি না এই ভাবনায় আমি অস্থির হয়ে উঠি। অবশেষে একটি বাস এলে তাতেই ঠেলাঠেলি করে কোনোমতে ওঠে পড়ি। বাসটিতে ছিল প্রচণ্ড ভিড়। তার ওপর যত্রতত্র থামছিল, যাত্রী উঠা-নামা করছিল।রাস্তা যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত নয়টা বাজার পাঁচ মিনিট অগে কলেজে পৌঁছাই।

উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সাথে একরাশ আনন্দ নিয়ে, কলেজে প্রবেশ করি। কলেজে গিয়ে আমার পরিচিত অনেককে পাই এবং আমার সহপাঠী অনেকের সাথে পরিচিত হই। আমরা একে অপরের সম্পর্কে জানি এবং এ বন্ধুত্ব করি ৷

যথাসময়ে উদ্বোধনী ক্লাস শুরু হয়। উদ্বোধনী ক্লাসে শিক্ষকগণ নানা ধরনের শিক্ষণীয় ও উপদেশমূলক কথা বললেন। এসব কথা জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে আমাকে নানাভাবে উৎসাহ ও শক্তি যুগিয়েছে। স্কুলের নির্দিষ্ট গন্ডি পেরিয়ে এই প্রথম আমি মুক্তভাবে জীবন পরিচালনার সুযোগ পেয়েছি। এই মুক্ত জীবন যেন কোনো ভুলের বশবর্তী হয়ে নষ্ট না হয় শিক্ষকগণ তাদের কথার মাধ্যমে এই দীক্ষা দিলেন।

আজ আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে বাংলা স্যারের কথা। তিনি এসে প্রথমেই জানিয়ে দিলেন, আজ কোনো ক্লাস নয়, আজ আমরা গল্প করেই কাটাব। ক্লাস করার অনেক সময় পাওয়া যাবে। তবে তার সেই গল্পের মাঝেই নিহিত ছিল জীবনে চলার পাথেয়। তিনি গল্পে গল্পে এমনভাবে আমি আমাদের ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন যে, অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। মনে মনে তখনই আমি আমার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য স্থির করি, বড় হয়ে আমি বাংলার শিক্ষক হবো ।

শুনেছি শিক্ষকরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। আজ আমি এ সত্যকে খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। আজ প্রতিটি ক্লাসেই শিক্ষকগণ আমাদের সাথে পরিচিত হয়েছেন এবং আমাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য কী কী করণীয় তা বিভিন্ন পরামর্শ ও উদাহরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ক্লাস শেষে আরও কয়েকজনের সাথে আমি পরিচিত হই। বিকেলে যখন বাড়ি ফিরি তখনও সারাটা রাস্তা আমার ভাবনার জগৎকে আলোড়িত করছিল স্যারদের অমূল্য কথামালা। আমি বুঝে নিয়েছিলাম, জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে হলে লেখাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। সেদিন বাড়ি ফিরে আমি যেন আমার ভেতরে পরিবর্তন অনুভব করলাম। পৃথিবী ও মানুষ সম্পর্কে আমি নতুনভাবে ভাবতে শিখছি। বাড়িতে আসতেই মা দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কলেজের প্রথম দিন কেমন কাটল বাবা? মাকে আমি সব খুলে বলি। তারপর কাপড় পাল্টে, ফ্রেশ হয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হই, তাদের সাথে আজকের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি ।

আজকের দিনটা আমার জীবনের একটি বাঁক বদলকারী দিন। আজকের দিনের কথা আমার হৃদয়ে চির অমলিন হয়ে থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top