মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান

Spread the love

মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান

মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান আলোচনা কর। (জা. বি. ১৬, ১৯/ অথবা, মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা বর্ণনা কর ।

প্রাককথন: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছে। নারীরা সশস্ত্র যোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সংরক্ষণ ও সরবরাহকারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া প্রবাসেও নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন।

→ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান:

নিম্নে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান আলোচনা করা হলো-

১. প্রত্যক্ষ যুদ্ধে নারীর অবদান: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে সকল নারীরা প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- খালেদা খানম, তারামন বিবি, কাঁকন বিবি, রিজিয়া চৌধুরী, মমতাজ বেগম প্রমুখ । মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী নারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খালেদা খানম। তিনি মাদারীপুর ও শরীয়তপুর এলাকায় কাজ করেন । তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণের পাশাপাশি যুদ্ধে মেয়েদের অংশগ্রহণেও উদ্বুদ্ধ করেছেন।

২. প্রশিক্ষণে নারী: নারীসমাজের অদৃশ্য প্রাণশক্তিকে মুক্তিযুদ্ধে প্রয়োগ করার নিমিত্তে তৎকালীন নারীদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে। এই ক্যাম্পে নারীদের সিভিল ডিফেন্স, নার্সিং ও সশস্ত্র যুদ্ধের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়াও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রতিদিন চলে রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ ।

৩. মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দান: বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাগণ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিলেন বিধায় তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশের শহুরে, শিক্ষিত অশিক্ষিত সর্বশ্রেণির নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছেন।

৪. সেবা প্রদানে নারী: নারীরা অসুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের নার্সিং বা সেবার দায়িত্ব পালন করতেন। সীমান্ত অঞ্চল ও মুক্তাঞ্চলে যেসব অস্থায়ী হাসপাতাল খোলা হয়েছিল সেখানে নারীরাই কাজ করতেন। এদের নার্সিং এর ওপর কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না । দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এসব নারী রোগীর সেবা করতে এগিয়ে আসতেন।

৫. তথ্য আদান-প্রদানে নারীর অবদান: যেকোনো যুদ্ধের সময় তথা আদান-প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ । এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অনেক সাহসী নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় গোপনে লিফলেট, পত্রিকা ইত্যাদি ছাপানো এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছানো জরুরি ছিল। মুক্তিযুদ্ধের অংশগ্রহণকারী বুদ্ধিজীবীদের চিঠিপত্র এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দেয়ার কাজে নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

৬. জনমত গঠনে নারীর অবদান: মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গঠনে বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে অনেক স্বাধীনতাকামী নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দেশি-বিদেশি নারী, লন্ডন প্রবাসী বাঙালি ও ভারতীয় নারী, মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বিভিন্ন সভার আয়োজন করে এবং বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে জনমত গড়ে তোলে ।

৭. অনুপ্রেরণাদানকারী হিসেবে নারী: মুক্তিযুদ্ধে নারীর অনুপ্রেরণা ছিল মুক্তিকামী মানুষের বড় শক্তি । মুক্তিযুদ্ধে এদেশের মা, বোন ও স্ত্রীরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার তুলনা নেই। অনেক মা ছেলেকে স্বেচ্ছায় মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়েছেন। শহিদ জননী জাহানারা ইমাম এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত । এই মহীয়সী নারী তার বড় ছেলে রুমীকে মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণ করেন ।

৮. প্রচার মাধ্যমে নারীর ভূমিকা: মুক্তিযোদ্ধাদের মনে বিজয়ের আশা জাগাতে, বিজয়ের আশার আলো জাগাতে বেতার মাধ্যম, পত্রিকা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

৯. কূটনৈতিক দায়িতে নারী: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলাদেশের নারীসমাজ ও দেশি-বিদেশি নারী সংগঠ নেত্রীকর্মীরা এগিয়ে এসেছিলেন।

শেষকথা: উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় কোনো একক প্রচেষ্টার ফসল ছিল না। তা ছিল নারী-পুরুষ, শিশু, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী প্রভৃতি সাধারণ জনগণের যৌথ প্রচেষ্টার ফল। যেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীসমাজও নিজ নিজ স্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল।তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যুদ্ধ জয়ে অগ্রণি ভূমিকা পালন করে।

Scroll to Top