ছাত্রজীবন
বা, দেশ ও জাতি গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা
বা, ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ভূমিকা- বর্তমান ছাত্র আগামীদিনের দায়িত্বশীল নাগরিক এর ভূমিকা পালন করবে ।স্বাভাবিকভাবেই সমাজের সকল স্তরের সঙ্গে একজন শিক্ষার্থীর পরিচয় থাকা খুব প্রয়োজন।শিক্ষায়তন দেশ ও সমাজের ক্ষুদ্রতম রূপ তাই সেখানে দেশ ও সমাজের ভাবনা প্রতিফলিত হয়। শিক্ষায়তনের সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনের উত্তাপ অফুরন্ত প্রাণশক্তি প্রতীক ছাত্র সমাজকে প্রতিনিয়ত স্পর্শ করে। ছাত্রজীবনকে মানুষ দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ জীবনের শস্য ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করে। ছাত্রজীবন নির্ধারণ করে দেয় পরবর্তী জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতা। নানা দায়িত্ব কর্তব্য পালনের দীক্ষা লাভ করতে হয় ছাত্রজীবনে। জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি ছাত্র সমাজকে দায়িত্ব নিতে হয় দেশ ও জাতির। ছাত্রজীবনে সংকীর্ণ বৃত্তের খোলস ভেঙে নতুনদিনের ভাব সম্মৃদ্ধ অঙ্গনে প্রবেশের শক্তি অর্জন করতে হয়।
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য- ‘ছাত্র নং অধ্যয় নং তপ’ অর্থাৎ লেখাপড়া বা অধ্যায়ন করা ছাত্র জীবনের সবচেয়ে বড় গুরু দায়িত্ব ও কর্তব্য।তবে লেখাপড়ার মধ্যে নিজেকে সীমিত না রেখে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধি করতে হবে।কর্মজীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সবথেকে উত্তম সময় ছাত্র জীবন। এই সময়ে ছাত্রদের জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে হবে। ছাত্রজীবনে যত বেশি পরিশ্রম করা যাবে ততো সফলতার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। ভোগবিলাস জীবন ত্যাগ করে একাগ্রতার সঙ্গে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ছাত্রজীবন কর্মজীবনে প্রবেশ এর প্রস্তুতি পর্ব। এই সময়ে আমাদের শিষ্টাচার ,নিয়মানুবর্তিতা, সদাচরণ ও নৈতিকতার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ব্যক্তিগত চরিত্রের বিকাশ সাধনের জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। মাতা- পিতাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করা,শিক্ষাগুরুর প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা, সততা , কর্মনিষ্ঠ ও সময়ের সদ্ব্যবহার এর মত সৎ গুণাবলী অর্জন করতে হবে ছাত্র জীবনে। শুধু পাস করা শিক্ষা গ্রহণ না করে বহুমুখী জ্ঞান চর্চা করতে হবে। আমাদের জাতীয় উন্নয়নে সচেতন নাগরিক হিসেবে ছাত্র সমাজের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। দেশ সেবার মানসিকতা ছাত্র জীবন থেকেই শুরু করতে হবে। জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ছাত্রসমাজ তাদেরকেই প্রকৃত দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। দেশ ও জাতির সম্মান বৃদ্ধির জন্য ছাত্র সমাজের দায়িত্ব সব থেকে বেশি। দেশের প্রতিকূল অবস্থায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে ছাত্রসমাজ। নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে দেশ ও দশের বৃহৎ স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে।
চরিত্র গঠন- চরিত্র হলো মানব জীবনের প্রধান সম্পদ। চরিত্র গঠনের উত্তম সময় ছাত্র জীবন। আমরা ছাত্র জীবনে যত বেশি উন্নত চরিত্রের অধিকারী হব ততই আমরা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষে পরিণত হতে পারব। চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমান। চরিত্রহীন মানুষ শিক্ষিত হলেও সমাজে সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ছাত্রজীবনে আমাদেরকে সত্যবাদী, আত্মসংযম, দেশপ্রেমিক ও ধৈর্যশীল প্রভৃতি গুণাবলী চর্চা করতে হবে।উন্নত চরিত্রের মানুষ হতে পারলেই সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে। চরিত্রবান মানুষ সমাজ ও দেশের সম্পদ।
নিয়মানুবর্তিতা- নিয়মানুবর্তিতা ছাড়া কখনোই ছাত্র জীবনে সাফল্য আসবে না। প্রতিটি ছাত্রকে তার জীবনের লক্ষ্য স্থির করে পরিকল্পনামাফিক চলতে হবে। জীবনের লক্ষ্য পরিপূর্ণ করতে হলে নিয়মানুবর্তিতার কোন বিকল্প নেই। ছাত্রজীবনের এই অভ্যাস তার সমগ্র জীবনকে প্রভাবিত করবে। যে ছাত্রটি জীবনের শুরু থেকেই নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণ করে বড় হচ্ছে তার ভবিষ্যৎ ততই ক্রমাগত উজ্জ্বল হবে। যদি কোন ক্রমে নিয়মানুবর্তিতা বিঘ্নিত হয় তাহলে ব্যক্তি জীবনে নেমে আসবে কালো অন্ধকার। ব্যক্তি জীবনের এই খারাপ ফল সমাজ ও রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে। ছাত্রজীবনে নিয়মানুবর্তী না হওয়ার ফলে অনেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষাতে খারাপ ফল করছে যার ফলে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে ।শেষ পর্যন্ত হতাশায় ডুবে কিছু শিক্ষার্থী অন্ধকার পথে প্রবেশ করেছে। আমাদের সচেতন হতে হবে এবং ছাত্র জীবন থেকেই নিয়মানুবর্তী হয়ে চলতে হবে।
নৈতিকতা চর্চা- আমাদের নীতি নৈতিকতার চর্চা করতে হবে ছাত্রজীবন থেকে। আজকের ছাত্র আগামীদিনের সুদক্ষ নাগরিক। তাদেরকে দেশের দায়িত্বশীল পদে বসতে হবে এবং দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। কোন প্রকার লোভে পড়ে অন্যায় কাজের অংশীদার না হওয়ার চর্চা করতে হবে ছাত্র জীবন থেকেই। নীতি-নৈতিকতাহীন মানুষ যতই শিক্ষিত হোক না কেন সে সমাজের জন্য ক্ষতিকর। নীতিহীন মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য দেশের বৃহৎ স্বার্থকে ত্যাগ করতে পারে। ছাত্রজীবনে থেকেই আমাদের পড়াশোনার পাশাপাশি সততার চর্চা করে যেতে হবে। অসৎ জীবনের মধ্যে প্রকৃত সুখ নেই, সৎ জীবনযাপনে মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সুখের ঠিকানা। ছাত্রজীবন থেকেই আমাদেরকে নীতি নৈতিকতা নিয়ে চলার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
শিষ্ঠাচার ও সৌজন্যবোধ- শিষ্টাচার ও সৌন্দর্যবোধের স্পর্শে একজন ছাত্র হয়ে ওঠে নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী।সৌন্দর্যবোধ ও শিষ্টাচার ব্যতীত প্রকৃত ছাত্র হওয়া যায় না। সৌন্দর্য ও শিষ্টাচার এর ছোঁয়াতেই একজন ছাত্র যেমন ভদ্র হবে তেমনি তার প্রাণ সম্পদ হয় গৌরবান্বিত। গুরুজনকে ভক্তি শ্রদ্ধা করা, কারো সঙ্গে উদ্ধত আচরণ না করা, বিনয়ী হওয়ার শিক্ষা অর্জন করতে হবে ছাত্র জীবনে। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ একজন ছাত্রের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। মানুষের সঙ্গে অসৌজন্য আচরণ ছাত্রজীবনে অকল্যাণ বয়ে আনে। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ সৃষ্টির জন্য একজন শিক্ষার্থীকে অর্থ সম্পদ ব্যয় করতে হয় না বরং এর মধ্য দিয়ে পাওয়া যায় জীবন বিকাশের প্রকৃত পথ।বিনয়ী শিক্ষার্থী শিক্ষকের কাছ থেকে শুধু শিক্ষা লাভ করে না সে আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ এর অভাবে শিক্ষার্থীরা বিপথগামী হয়ে পড়ে। ছাত্রজীবন থেকেই শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হয়ে ওঠার সর্বোত্তম চেষ্টা করতে হবে।
সমাজসেবা- সমাজের সকল শুভ কাজের অগ্রভাগে নেতৃত্ব দেয় ছাত্রসমাজ। ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, শীতের তীব্রতায় কাতর দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ায় ছাত্র সমাজ। অসহায় মানুষকে সাহায্য করার ব্রতী গ্রহণ করতে হয় ছাত্রজীবন থেকেই। সেবা ধর্মের মাধ্যমে পরিচয় পাওয়া যায় মহত্ব ও উদারতার ।ছাত্ররাই চির নবীন, চির সবুজ। মানুষের দুঃখ, কষ্ট ছাত্রদের কোমল হৃদয়কে স্পর্শ করে তাই তারা আর্ত-মানবতার সেবায় দুঃখী মানুষের পাশে এসে দাঁড়াই। ছাত্র জীবন সমাজসেবার উত্তম সময়। সামাজিক বিপর্যয়ে কখনোই ছাত্রসমাজ নীরব দর্শকের ভূমিকায় পালন করে না। তারা প্রতিবাদে মুখর হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে।সংসারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থ দ্বারা ছাত্র সমাজ কখনই তাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখে না। মানবতাবোধের জাগরণ ঘটাতে হয় ছাত্রজীবন থেকে। মনে রাখতে হবে, পরোপকারের মধ্যে লুকিয়ে থাকে গভীর আত্মিক প্রশান্তি। ছাত্র জীবন হলো মানব সেবার সর্বোত্তম সময়।
বনায়নের ছাত্র সমাজের ভূমিকা- মানব সভ্যতা টিকে থাকার জন্য মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় বনভূমি রয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ।আমাদের দেশকে বাসোপযোগী করতে হলে বনায়নের বিকল্প নেই। বনায়ন এর জন্য ছাত্রসমাজ সবথেকে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষকদের পামর্শে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খালি জায়গাতে পরিকল্পিত উপায়ে ফলোজ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ রোপণ করা যেতে পারে। রাস্তার দু’পাশে গাছ লাগালে রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। ফলোজ বৃক্ষরোপণ এর মধ্য দিয়ে দেশের ফলের চাহিদা কিছুটা হলেও মেটানো সম্ভব। সাধারণ মানুষের মধ্যে বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা মূলক কাজে ছাত্র সমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। ছাত্রসমাজের ঐক্য বদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সারাদেশে একযোগে বনায়নের মধ্য দিয়ে দেশের বনাঞ্চল বৃদ্ধি করা সম্ভব। সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্র সমাজের ভূমিকা- যে দেশের মানুষ যত বেশি শিক্ষিত সে দেশ তত বেশি উন্নত। আমাদের দেশকে উন্নত বিশ্বে পরিণত করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন নিরক্ষরতা দূর করা ।নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে ছাত্র সমাজকে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে হবে।একজন শিক্ষিত ছাত্র তার প্রতিবেশী নিরক্ষর মানুষকে অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন মানুষে পরিণত করতে পারে। ছাত্রদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা খুব উন্নত থাকে তাই ছাত্রদেরকে নিরক্ষরতা দূরীকরণের কাজে এগিয়ে আসতে হবে। ট্রেন, বাস টার্মিনালের বসবাসরত ভাসমান মানুষ ও বস্তিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়ার জন্য ছাত্রসমাজ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুলতে পারে। পরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ছাত্রসমাজ এগিয়ে চললে নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে পুরোপুরি আমরা বের হয়ে আসতে পারবো।
কৃষি বিপ্লবে ছাত্রদের দায়িত্ব- আমাদের দেশ কৃষি প্রধান। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের দেশের বৃহৎ জনসংখ্যা কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কৃষি ব্যবস্থাপনায় বিপ্লব ঘটানোর জন্য ছাত্রসমাজ বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে পারে। আধুনিক কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের ধারণা দিতে পারে ছাত্রসমাজ। নতুন নতুন বীজ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক সার সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দিতে পারে ছাত্ররা। পতিত জমিতে কৃষি ফসল উৎপাদনের জন্য শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে কৃষককে সহায়তা করতে পারে। সমবায় পদ্ধতিতে জমি চাষের জন্য উৎসাহ দিতে পারে ছাত্র সমাজ।কৃষক বাঁচলে বাঁচবে কৃষি আর কৃষিকাজে কৃষককে সবথেকে বেশি সাহায্য রাখতে পারে ছাত্র সমাজ। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকের নানামুখী সমস্যা সমাধানে সহায়তা করতে পারে ছাত্রসমাজ। পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য কীটনাশক ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে হাতে কলমে শিক্ষা দিতে পারে কৃষিবিদ্যা অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা। কৃষি বিপ্লব ঘটাতে হলে ছাত্রদের অবশ্যই কৃষকের পাশে দায়িত্ব নিয়ে দাঁড়াতে হবে।
সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ছাত্র সমাজের দায়িত্ব- সংস্কৃতি হলো একটি জাতির পরিচযয়ের ধারক। নিজের জাতিসত্তাকে ধরে রাখতে হলে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কোন বিকল্প নেই। সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটানোর ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে আমাদের ছাত্রসমাজ। ছাত্রজীবনে নাটক, গান, কবিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা প্রভৃতি সাংস্কৃতিক ধারা চর্চার মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে দেশীয় সংস্কৃতি চর্চা থেকে যুব সমাজ বিমুখ হচ্ছে। সাংস্কৃতিক এই অবক্ষয়ের ফলে সমাজে নানা বিধ বিপত্তি দেখা দিচ্ছে। উগ্র আচরণ যুবকদের মধ্যে যেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে ঠিক তেমনি ভাবে যুবশ্রেণি বিপথগামীও হচ্ছে। সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে একটি সুস্থ জাতি গড়ার জন্য ছাত্র সমাজকে বিশেষ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতির আত্মগৌরব বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে ছাত্র সমাজ।
স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় ছাত্র সমাজ – দেশের যেকোনো প্রয়োজনে ছাত্রসমাজ সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগে মানবতার চরম বেদনার ডাক শুনে সবার আগে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় ছাত্রসমাজ। সমাজ ও দেশের যেকোনো প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় মানুষের কল্যাণে ছাত্রসমাজ নিজেকে নিয়োজিত রাখে। একুশে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পুষ্প অর্পণ অনুষ্ঠানের শৃংখলার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিয়ে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছাত্র সমাজ স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় স্ব-ইচ্ছায় অংশগ্রহণ করে থাকে এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করে।
সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে ছাত্র সমাজের ভূমিকা- সামাজিক সচেতনতাই একটি জাতিকে সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন জাতিতে পরিণত করতে পারে। অসচেতন জাতি যত মেধাবী হোক না কেন তারা কখনোই সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে না। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট সেবার কারণে যে কোন সংবাদ মানুষের কাছে মুহুর্তের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে। যেকোনো সংবাদ পড়া মাত্রই সেটিকে বিশ্বাস করা যাবে না। দেশের কিছু নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যম রয়েছে যেগুলোর সাথে সামাজিক যোগাযোগে প্রাপ্ত সংবাদের সামঞ্জস্য লক্ষ্য করে বিশ্বাস করতে হবে। বিশেষত ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িক সহিংস বিস্তারের ক্ষেত্রে অসচেতনতা সবথেকে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। ছাত্র সমাজ সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। করোনাভাইরাস প্রভাব বিস্তার রোধে সরকার মাস্ক পরার উপর জোর দিচ্ছে । এই মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পারে। আবার বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য পরিষ্কার স্থানে পানি জমিয়ে না রাখার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পারে। সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা ও সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার বিষয়ে মানুষকে সচেতন হতে সরকারের পাশাপাশি ছাত্র সমাজ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে ।
উপসংহার- বর্তমান বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের ছাত্র সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। ছাত্রসমাজ যদি তার লেখাপড়ার পাশাপাশি যথাযথ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে পারে তাহলেই আমাদের দেশ উন্নত বিশ্বে পদার্পণ করবে। নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের দেশ তবুও এই দেশের ছাত্ররা হলো সকল আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। ছাত্র সমাজকে এই দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে এবং দেশের যা-কিছু মঙ্গল সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যেতে হবে। ছাত্রদের নিজের জীবনকে সুপরিকল্পিতভাবে যেমন গড়ে তুলতে হবে ঠিক তেমনি ভাবে দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে।