তোমার কলেজে মহান বিজয় দিবস উদযাপনের একটি দিনলিপি লেখ।
[সকল বোর্ড-২০১৮]
১৬ ডিসেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার ।
রাত ১০টা ৩০ মিনিট, যশোর।
আজ বিজয় দিবস। পৃথিবীর প্রত্যেকটি জাতির জীবনে এমন কতকগুলো দিন আসে যার স্মৃতি কোনোদিন ভুলা যায় না। আমাদের জাতীয় জীবনে তেমনি একটি স্মৃতিময় অমলিন দিন বিজয় দিবস বা ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। তাই এই দিনটি একই সাথে গর্বের ও আনন্দের।
আজ সকালে অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা আগে ঘুম ভেঙে গেল। আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে ওঠে বসলাম। জানালা খুলতেই কানে ভেসে আসে দেশাত্মবোধক গানের সুর। দূরে কোথাও বাজছে, “প্রথম বাংলাদেশ আমার, শেষ বাংলাদেশ …..
আজ কোনো লেখাপড়া নেই, তবে কলেজে যেতে হবে। বিজয় দিবস উদ্যাপনের অনুষ্ঠান আছে। ফুরফুরে মেজাজে স্নান সেরে তৈরি হয়ে নিই। কলেজে গিয়ে দেখি পুরো ক্যাম্পাস সাজানো হয়েছে এক বর্ণিল সাজে। সকাল ৭.৩০ মিনিটে কলেজ থেকে বিজয় দিবসের র্যালি বের হয়। শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ অনেকে র্যালিতে যোগদান করে। র্যালি শেষে শহীদদের উদ্দেশ্যে শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। এর পর বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়। সকালের অুনষ্ঠার শেষে বেলা ১২ টার দিকে বাড়ি চলে যাই। বাড়ি গিয়ে দেখি মা ভালো রান্নাবান্নার আয়োজন করেছিলেন। বাবা মায়ের সাথে খেতে বসি। গল্পের ছলে বাবা ১৬ ডিসেম্বরের বিভিন্ন তাৎপর্য তুলে ধরেন। বাবার কথায় আমি ১৬ ডিসেম্বর সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। খাওয়া শেষ করে বিশ্রাম নিই। ঠিক দুইটার সময় একটা রিকশা নিয়ে সোজা চলে যাই কলেজ প্রাঙ্গণে। শিক্ষার্থীসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই চলে এসেছে। ঘড়ির কাঁটায় তিনটা বাজতেই জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। সবার সাথে আমিও দাঁড়িয়ে এতে অংশগ্রহণ করি। এরপর একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এলাকার কয়েকজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন। পাকিস্তানিদের নির্মম অত্যাচারের কথা শুনে আমার গা শিউরে ওঠে। আবার মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের কাহিনি শুনে রোমাঞ্চিতও হই। তাঁদের বক্তব্য শুনে আমি বিজয়ের চেতনায় উদ্দীপ্ত হই। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ গড়ার শপথ নিই মনে মনে ।
এরপর এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন – করা হয়। শিক্ষার্থীদের গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি আর অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। আমি শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’, কবিতাটি আবৃত্তি করি। মঞ্চে উঠার আগে আমার বুক ধুক ধুক করছিল। তবে আমার আবৃত্তি যে মন্দ হয়নি তা বুঝতে পারলাম শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া দেখে। আমি ডায়াজ থেকে নামার পরও উপস্থিত শিক্ষার্থী-অভিভাবক-অতিথিদের করতালি যেন থামছিলই না । রাত আটটার দিকে বাসায় ফিরে আসি। আমার মন তখন দারুণ প্রশান্তিতে ভরে আছে। এবারের বিজয় দিবসে আমি এক নতুন প্রেরণা ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়েছি। এই দিনটির কথা আমি কখনো ভুলব না।