পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ওপর দিনলিপি লেখ।
(বরিশাল বোর্ড-২০১৭,সিলেট বোর্ড–২০১৬; যশোর বোর্ড-২০১৬)
১৪ এপ্রিল ২০২২, বুধবার
রাত ১০টা ৩০ মিনিট, ঢাকা।
আমি আজ ভোরের আলো ফোটার অনেক আগেই ঘুম থেকে ওঠে যাই।কিছু দিন পূর্বেই মা আমার জন্য নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি কিনেএনেছিলেন। দ্রুত গোসল সেরে সেই কাপড় পরে নিই। বাবা তখনও ঘুমিয়ে আছেন।মা রান্নাঘরে কিছু একটা করছেন।মাকে শুভ নববর্ষ জানাতেই মা বললেন, পায়েস রেঁধেছি, খেয়ে নে।মায়ের হাতের পায়েস যেন অমৃত। কিন্তু আমার মন যেন ছুটে গিয়েছে তখন রমনার। তাই তাড়াতাড়ি পায়েস খেয়ে বেরিয়ে পড়ি।
একটি আমি যখন রমনায় পৌঁছাই, ততক্ষণে আমার বন্ধুরাও এসে পড়েছে। পুরো এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে এক মিলনমেলার। কিছুক্ষণের মধ্যেই সোনালি কিরণ ছড়িয়ে পয়লা বৈশাখের উদীয়মান সূর্য আকাশে উকিঝুঁকি দিতে শুরু করে। তখন সেখানে আমি এক অভূতপূর্ব পরিবেশ লক্ষ করলাম। সব শ্রেণি-পেশা ও বয়সের নারী-পুরুষ সেখানে সমবেত হয়েছে। তাদের পরনে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পোশাক। তরুণীরা পরেছে লালপেড়ে সাদা শাড়ি, হাতে রঙিন কাচের চুড়ি, খোঁপায় ফুল, গলায় ফুলের মালা এবং কপালে টিপ; আর ছেলেরা পরেছে পাজামা ও পাঞ্জাবি। সেই উচ্ছল জনস্রোতের সাথে ভেসে ভেসে আমরা পৌঁছে গেলাম বটমূলে, ছায়ানটের অনুষ্ঠানে। সেখানে শতকণ্ঠে তখন গাওয়া হচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের আগমনী গান ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। সেখানে আমরা দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করি। রমনাজুড়ে বিভিন্ন দোকানিরা বাঁশ, বেত ও মাটির তৈরি বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছিল বটমূলে ।
কুটিরশিল্পসহ ছিল অনেক সৌখিন দ্রব্যও। আমি একতারা ও পাটের তৈরি শোপিস কিনি। ঘুরতে ঘুরতে আমরা একসময় গিয়ে দাঁড়াই খাবারের স্টলে। সেখানে আমরা বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবারের স্বাদ নিই ৷ তারপর আমরা চলে যাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে। অংশ নিই মঙ্গল শোভাযাত্রায়। ইউনেস্কো কর্তৃক ‘মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃত এ শোভাযাত্রায় গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। ততক্ষণে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ, টিএসসি এবং চারুকলাসহ সমগ্ৰ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিণত হয়ে যায় এক বিশাল জনসমুদ্রে।
সময়ের সাথে সাথে লোকসমাগম ও গরম দুটোই বাড়ছিল। আর দেরি না করে আমরা যার যার বাসায় চলে যাই। যাওয়ার আগে মায়ের জন্য চুড়ি এবং বাবার জন্য একটি কলমদানি কিনে নিয়ে যাই। তাঁরা উপহার পেয়ে খুবই খুশি হন এবং আমাকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করেন। ইতোমধ্যে বাড়িতে প্রচুর আত্মীয়-স্বজনের সমাগম ঘটে। মা খুব সুন্দর করে বাড়িটি গুছিয়ে রেখেছিলেন এবং বিপুল খানাপিনার আয়োজন করেন । হৈ-হুল্লোড় ও গল্পগুজবের মধ্য দিয়ে একসময় দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো। অতিথিরাও একে একে বিদায় নিলেন।
এরপর সন্ধ্যায় বাবা-মাকে নিয়ে শিল্পকলায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি লোকসঙ্গীত ও বাউল গানের আসর বসেছে। একাডেমি চত্বরে বিভিন্ন কারুপণ্যের প্রদর্শনী ও হরেক রকম মিষ্টান্নের আয়োজন ছিল। খুব সুন্দর একটি সন্ধ্যা কাটিয়ে বাবা-মাকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসি। সত্যিই এ দিনটি আমার কাছে একটি বিশেষ দিন হয়ে থাকবে। নতুন বাংলা বছরটি এভাবেই হাসি-আনন্দে কাটুক, এই কামনা করি।
I want more things. So give me everything correctly please.