দুঃখের মতো এত বড় পরশ পাথর জগতে আর নাই।
[রা. বো. ’০১, ’১০; দিনাজ. বো. ’১১]
ভাব-সম্প্রসারণ : মানব জীবন পুষ্পশয্যা নয়। পৃথিবীতে নিরবচ্ছিন্ন সুখ বা দুঃখ বলতে কিছুই নেই। সুখ, দুঃখ যেন একটি অপরটির পরিপূরক । আলোর পাশে ঠিক অন্ধকারের মত একটির অনুপস্থিতিতে অন্যটি অনুভূত হয় ।
কোনো দিন যে ব্যক্তি দুঃখ দারিদ্র্যের সম্মুখীন হয়নি সে কোনদিন দুঃখ অনুভব করতে পারে না। তেমনি যে ব্যক্তি চিরসুখী তার কাছে দুঃখের কোনো অভিজ্ঞতা নেই এবং দুঃখের বেদনাও সে উপলব্ধি করতে পারে না। কখনো সে তার প্রকৃত বন্ধুকেও চিনতে পারে না। মানুষ দুঃখ কষ্টে যে অভিজ্ঞতা লাভ করে ভবিষ্যতে তাকে তা ঠিক পথে চলতে সাহায্য করে। পরশপাথর যেমন লোহাকে সোনায় রূপান্তরিত করে তেমনি দুঃখে পড়লে মানুষের জীবন সঠিক অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হয়। জীবনের কঠিন ও গভীর সত্য চোখের সামনে ভেসে উঠে। পৃথিবীর মহৎ ব্যক্তিগণ দুঃখ কষ্টের কঠিন সাগর পাড়ি দিয়েই সাফল্যের সূর্যকিরণ দেখতে পেয়েছিলেন। আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) জীবনে বহু প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন। এরূপ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ফেলেই মহান আল্লাহতায়ালা তাকে খাঁটি মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। মানুষের মনুষ্যত্ব দুঃখের দ্বারাই পরীক্ষিত হয়। দুঃখই তাকে দান করে মহত্ত্ব আর মহৎ কর্মের কারণে সে স্মরণীয় হয়ে থাকে চিরকাল।
দুঃখ, কষ্ট ও ত্যাগ ছাড়া কোনো জাতি সাফল্য অর্জন করতে পারে না। তাই জীবনে সুখের চেয়ে দুঃখের প্রয়োজনীয়তা কোন অংশে কম নয়। তাই মনীষীরা দুঃখকে পরশ পাথরের সাথে তুলনা করেছেন।