পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা কর
মূলভাব : কোনো মানুষই পাপী হয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে না। সার্বিক পরিস্থিতিই তাকে পাপ কাজে লিপ্ত করে। তাই পাপীকে ঘৃণা না করে পাপকেই ঘৃণা করা উচিত।
ভাব-সম্প্রসারণ : অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষের পার্থক্য এই যে, মানুষ সামাজিক জীব। সে খুব সহজেই নিজেে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে কখনো কখনো এর ব্যত্যয় ঘটে। বিভিন্ন কারণবশত সে নিয়ন্ত্রণ হরিয়ে ফেলে। এর ফলে সে পাশবিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তখন সে সবার মাঝে চিহ্নিত হয় ‘পাপী’ হিসেবে। কিন্তু সে তো আর পাপী হয়ে জন্মগ্রহণ করেনি। সে হয়তো চেয়েছিল সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে। মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে চলতে। কিন্তু তা সে পারেনি। কেন পারেনি? এর কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে এর জন্য কেউ না কেউ অবশ্যই দায়ী। হয়তো ক্লেদাক্ত কোনো পরিবেশের মধ্যে সে বেড়ে উঠেছে। অথবা পঙ্কিল সমাজের বিষাক্ত আবহাওয়া গ্রাস করেছে তার মনের সুকুমার বৃত্তি। কিংবা নষ্ট অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে সে বেড়ে উঠেছে একজন নষ্ট মানুষ হয়ে। অনেক সময় একজন শান্ত স্বাভাবিক মানুষও উত্তেজনার বশে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় সে মুহূর্তের মধ্যে এমন কাজ করে ফলে যে, পরে সে কারণে অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ হয়। কিন্তু আমরা তাকে শুদ্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ দেই না। বরং তার গায়ে কলঙ্কের কালিমা লেপন করতে সচেষ্ট হই। আমাদের এই ধরনের মানসিকতা ঠিক নয়। এতে করে পাপের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। পাপীর অন্তরে তখন যে চিতা জ্বলে, তার আগুনে সে আরও অগ্নিকান্ড ঘটায়। কাজেই পাপীকে ঘৃণার চোখে না দেখে মানবিকভাবে তার বিশ্লেষণ করা উচিত। এটা নিশ্চিত যে, যদি পাপীকে ঘৃণা না করে তাকে সংশোধনের সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে সমাজে পাপের মাত্রা অনেক কমে যাবে । তাইতো মনীষীরা বলেছেন, ‘পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়।’ পাপ থেকে দূরে থাকতে হবে কিন্তু পাপীকে বুকে টানতে হবে।
মন্তব্য: আমাদের উচিত পাপকে ঘৃণা করে তা থেকে দূরে থাকা। আর পাপীকে ঘৃণা না করে তাকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।