প্রতিবর্ণীকরণ কাকে বলে? প্রতিবর্ণীকরণের নিয়ম লেখ

Spread the love

প্রতিবর্ণীকরণ কাকে বলে ? প্রতিবর্ণীকরণের নিয়ম লেখ

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বিদেশি শব্দগুলাে প্রধানত আরবি, ফারসি ও ইংরেজি ভাষা থেকে এসেছে। আরও কিছু বিদেশি ভাষার শব্দ বাংলায় গৃহীত হয়েছে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে। বিদেশি ভাষার শব্দগুলাে বাংলায় ব্যবহৃত হওয়ার সময় উচ্চারণগত তথা বর্ণগত কিছু সমস্যা দেখা দেয়। কারণ সব ভাষার বর্ণ একই উচ্চারণের অনুগত নয়। বিভিন্ন ভাষার মধ্যে ধ্বনিগত পার্থক্য থাকায় উচ্চারণের ভিন্নতা দেখা দেয় এবং এক ভাষার কোন বর্ণের পরিবর্তে অন্য ভাষার কোন বর্ণ ব্যবহৃত হবে তা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। 

ধ্বনিবিজ্ঞানের  পরিভাষার সাথে বিদেশী শব্দ তথা ইংরেজি শব্দের বর্ণান্তরীকরণ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। প্রতিবর্ণীকরণ শব্দটি এসেছে ইংরেজি Transliteration শব্দ থেকে। Transliteration এর আভিধানিক অর্থ বর্ণান্তরিতকরণ বা ভিন্ন ভাষার বর্ণমালায় লিপিবদ্ধকরণ বা প্রতিবর্ণীকরণ । সুতরাং নবাগত বিদেশী শব্দের মূল উচ্চারণের গ্রহণযােগ্যতা বা শুদ্ধতা রক্ষার জন্য যে সব রীতি বা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তাকে প্রতীবর্ণীকরণ (Transliteration) বলা হয়। । তাই বলা যায়, প্রতিবর্ণীকরণ বিদেশী শব্দের বাংলা ভাষায় বর্ণান্তরীকরণ প্রক্রিয়ার কিছু সংখ্যক নিয়ম-রীতির সমষ্টি ছাড়া আর কিছু নয়। প্রতিবর্ণীকরণের অনেক নিয়ম-পদ্ধতি আছে ।

(ক) ভাষার মূল শব্দের উচ্চারণে যে যে বর্ণ থাকবে বাংলা বানানেও সে সব শব্দের যথাযথ প্রয়ােগ থাকবে। প্রকৃত উচ্চারণে যদি ‘ঈ’ বা ‘উ’ থাকে তবে প্রতিবর্ণীকরণের সময় বাংলায় তা হুবহু অনুসরণ করতে হবে। যেমন- ডীন dean, সীল-Seal. বীট-beet ,ঈস্ট- east, বিট-bit, ইত্যাদি ।

(খ) যদি মূল শব্দে ‘অ’ বা বিকৃত ‘এ’ থাকে, তাহলে শব্দের শুরুতে ‘অ্যা’ এবং মধ্যে ‘এ্যা’ হবে। যেমন- অ্যাসিড-Acid, হ্যাট-hat অবিকৃত উচ্চারণের ক্ষেত্রে এ’ বসবে যেমন- এন্ড -And, Bed- বেড।

(গ) বাংলায় ‘ঘ’ স্থলে চলতি রীতি অনুসারে ‘উ’ এবং ‘ও’ লেখাই বাঞ্জণীয় । যেমন- Wilson-  উইলসন, Wood- উড, Way- ওয়ে প্রভৃতি।

(ঘ) মূল শব্দগুলােতে বিবৃত ‘অ’ থাকলে বাংলায় প্রথমে ‘আ’-কার এবং মধ্যে ‘অ’-কার হবে । যেমন-club-ক্লাব, Sir-সার, bulb-বাল্ব, budjet- বাজেট, focus- ফোকাস ইত্যাদি ।

(ঙ) ইংরেজি ‘sh’, ‘sion’, ‘ssion’, ‘tion’ প্রভৃতি ধ্বনিসমষ্টির জন্য বাংলায় ‘শ’ ব্যবহার করাই শ্রেয়। যেমন- short- শর্ট, shirt- শার্ট, division- ডিভিশন, mission-মিশন, station- , caution- কোশন । ব্যতিক্রম : question- কোএস্চন।

(চ) ‘f’ ও ‘v’ স্থানে যথাক্রমে ফ’ ও ‘ভ’ হবে। যেমন-foot-ফুট, vote- ভােট প্রভৃতি। যদি মূল শব্দে ‘v’- এর উচ্চারণ যদি ‘f-এর মতাে হয়, তবে বাংলা বানানের ক্ষেত্রে ‘ভ’-এর পরিবর্তে ফ’ হবে। যেমন-von- ফন (ভন হবে না)।

(ছ) বিদেশী শব্দসমূহের মূল উচ্চারণে ‘s’ থাকলে সেই ক্ষেত্রে ‘s’ এর স্থলে ‘স’ হবে। যেমন-ক্লাস, খাস, জিনিস, আসল, খ্রিস্টাব্দ ইত্যাদি ।

(জ) তবে নবাগত যেসব বিদেশী শব্দের (ইংরেজি) শুরুতে বা মধ্যে ‘st’ আছে সেগুলাের ক্ষেত্রে বাংলায় ‘স্ট’ যুক্ত বর্ণ হবে। যেমন-store- স্টোর, master- মাস্টার, poster, stall- স্টল ইত্যাদি।

(ঝ) আরবি ‘সিন’, ‘সােয়াদ’, ফারসি ‘সে’- এর জন্য বাংলা ভাষায় ‘স’ ব্যবহার করতে হবে । যেমন- ইসলাম, সালাম, মুসলমান, তসলিম, সালাত, সেনি, সেপায়া, সেরা ইত্যাদি।

(ঞ) আরবি ‘শি’ ধ্বনির ক্ষেত্রে বাংলায় ‘শ’ লেখা হয়। যেমন-শাফায়ত, শহিদ, শাবান, এশা, শাহাদত ইত্যাদি।

(ট) অনেক ফারসি শব্দও ‘শ’ দিয়ে লেখা হয়। যেমন-শাহানা, শাহ্, শায়েস্তা, শামি ইত্যাদি।

(ঠ) আবার অনেক ফারসি শব্দ বাংলায় ‘শ’ বা ‘স’ উভয় বর্ণ দিয়ে লেখা হয় । যেমন- {শানাই, সানাই}, {শাদিয়ানা, সাদিনা}, {শাহানা, সাহানা} ইত্যাদি।

(ড) আরবি ভাষার ‘যে’, ‘যাল’, ‘যােই’ বর্ণের জন্য বাংলায় য’ ব্যবহার করা উচিত হবে । যেমন নামায, আযান, ওযু, কাযা, যােহর, যুলমাৎ ইত্যাদি ।

(ঢ) আবার আরবি ও ফারসি ভাষার এরূপ অনেক ধ্বনিই ‘য’ বা জ’ উভয় রূপেই বাংলায় লেখা হয়। যেমন- (আযল, আজল}, {আযমাইশ, আজমায়েশ}, (যাদু, জাদু}, {যেয়াফত, জেয়াফত} ইত্যাদি।

1 thought on “প্রতিবর্ণীকরণ কাকে বলে? প্রতিবর্ণীকরণের নিয়ম লেখ”

  1. Pingback: বাংলা ভাষার ইতিহাস ও ব্যবহারিক বাংলা সাজেসন্স | Cholo Shekhe

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top