প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক । ভাবসম্প্রসারণ

Spread the love

প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক ।

মূলভাব : প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবেই মানুষ নানা ধরনের জিনিস আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করে চলছে। প্রয়োজনীয়তার যেমন শেষ নেই তেমনি উদ্ভাবনেরও শেষ নেই। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় মানুষ তাই আবিষ্কার করে চলছে নিত্যনতুন সামগ্রী।

সম্প্রসারণ : নতুন নতুন দ্রব্য আবিষ্কার করে মানুষ কানায় কানায় তার চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে। প্রয়োজন থেকেই জন্ম নিচ্ছে আবিষ্কারের চিন্তা। একসময় মানুষ গুহায় বাস করতো। তারা ধাতুর ব্যবহার জানতো না, আগুনের ব্যবহার জানতো না। খাদ্যের জন্য তারা যখন পশু শিকার করতে গেল তখন ধারাল অস্ত্রের প্রয়োজন হলো। তাই তারা পাথরখন্ডদিয়ে অস্ত্র বানানো শিখল। একসময় মানুষ কাঁচা গোশত খেত। কিন্তু তারা যখন তা সিদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল, তখন তারা পাথরে পাথরে ঘর্ষণ দিয়ে আগুনের উদ্ভাবন করল। এভাবে সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় মানুষ কত কিছুই না উদ্ভাবন করেছে। মানব সভ্যতার সে ঊষালগ্ন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যত আবিষ্কার হয়েছে যদি তার একটি খতিয়ান তুলে ধরা হয়, তা হবে অনেক দীর্ঘ। তবু মানুষ বসে নেই। নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য, আরাম-আয়েশের জন্য, সময়কে বাচানোর জন্য, শ্রম বাঁচানোর জন্য, বিনোদনের জন্য একের পর এক নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করে চলেছে। পথের দূরত্বকে অতিক্রম করার জন্য মানুষ ঘোড়া, হাতি, উট, ইত্যাদির ওপর নির্ভর করতো। এরপরচাকা আবিষ্কার করলো যা যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তন এনে দিয়েছে।  অধিকতর সুবিধার কথা ভেবে আবিষ্কার করলো বাষ্পীয় ইঞ্জিন। তারপর একে একে আবিষ্কার করল-বিদ্যুৎ, উড়োজাহাজ, রেডিও, চলচ্চিত্র, গ্রামোফোন, পেনিসিলিন, টিলিফোর, টিলিভিশন, ভিসিপি, স্যাটেলাইট আরো কত কি। প্রতিটি আবিষ্কারের পেছনেই কাজ করেছে মানুষের ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত প্রয়োজনীয়তা। প্রাচীনকালের রাজা-বাদশারা যুদ্ধে ঢাল তলোয়ার হাতি-ঘোড়া ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন তা হয় না। এখন ব্যবহার হয়- কামান, বন্দুক, ট্যাঙ্ক, সাবেমেরিন, রকেট শেল, মিসাইল ইত্যাদি। মানুষের জীবনযাপনের ধরন যেমন দ্রুত পাল্টাচ্ছে তেমনি মানুষ নতুন নতুন জিনিসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। আর এ থেকেই সে উদ্ভাবন করে নিচ্ছে চাহিদামতো নতুন জিনিস। এ চাহিদা কখনো শেষ হবে না। তাই উদ্ভাবনের এ ধারা অব্যাহত থাকবে আজীবন।

মন্তব্য: মানুষ যদি প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করতো তাহলে তার জীবনযাত্রা আজ এতটা সহজ হতো না। অস্তিত্বের সঙগ্রামে টিকে থাকার জন্য, আরাম-আয়েশের জন্য, সুখের জন্য মানুষ নিরন্তর উদ্ভাবনে লিপ্ত। তাই এ কথা স্বীকার করতেই হয় প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top