বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে
মূলভাব : সৌন্দর্যের ব্যাপারটি আপেক্ষিক। নির্দিষ্ট স্থান এবং পাত্রের ওপর এটি নির্ভর করে। যা সুন্দর,তা যথাস্থানেই সুন্দর। উপযুক্ত পরিবেশ কিংবা পরিস্থিতির অভাবে অনেক সুন্দর জিনিসও অসুন্দর দেখায়।
ভাব-সম্প্রসারণ : বন্য প্রাণীদের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বিকশিত হয় বনেই। গভীর জঙ্গলে বিচরণশীল কোনো হিংস্র প্রাণীকে যদি বন্দী করে চিড়িয়াখানায় আনা হয়, তাহলে তার সে সৌন্দর্য আর থাকে না। মায়ের কোলে ফুটফুটে শিশুর যে সৌন্দর্য, জন্তুর কোলে তা নয়। আবহমান কাল ধরে এটাই পৃথিবীর রীতি। ফুলের বাগানে ফুল যতক্ষণ ফুটে থাকে, ততক্ষণ সে অপরূপ সৌন্দর্যের আধার। কিন্তু বৃন্ত থেকে ফুলকে আলদা করে যখন হাতে নেয়া হয় তখন ফুলের সেই অপরূপ সুন্দর আর থাকে না। গ্রামবাংলার মেঠোপথ দিয়ে কৃষক যখন লাঙ্গল কাঁধে হেঁটে যায়, তখন তার সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। কিন্তু জীবন ও জীবিকার তাগিদে কোনো কৃষক যখন উঠে আসে আলো ঝলমর শহরে, তখন তাকে বড়ই খাপছাড়া মনে হয়। অপার সৌন্দর্যের কোনা ছাপই তখন তার মধ্যে আর অবশিষ্ট থাকে না। অফুরন্ত জলের মধ্যে মাছেরা যখন স্বাধীনভাবে খেলা করে, তখন তা দেখে আমরা এক ধরনের নান্দনিক সৌন্দর্যে অভিভূত হই; কিন্তু জলের মাছকে যখন ডাঙ্গায় তুলে আনা হয়, তখন তার সেই সৌন্দর্য থাকে কী? এই দৃশ্য যেমন উপভোগ্যও নয় তেমনি মানানসইও নয়। তাই স্বাভাবিক এবং প্রকৃতি প্রদত্ত ব্যবস্থাই সকলের জন্য উত্তম ব্যবস্থা, কাউকে জোর করে স্থানান্তরিত করলে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্যও নষ্ট হয়। স্বাভাবিক জীবন থেকে বিছিন্ন হলে যে কোনো প্রাণীর নিজের শক্তি, সাহস ও মেধা ক্ষুণ্ণ হয় ।
মন্তব্য: জগতের অনাবিল সৌন্দর্য প্রাণভরে উপভোগ করতে হলে যার যেখানে অবস্থান তাকে সেখানেই থাকতে দেয়া উত্তম। কেননা, যেখানে যার বাস তাকে ঠিক সেখানেই মানায়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, কৃত্রিমতা সৌন্দর্য হানিকর, আর স্বাভাবিক পরিবেশ সৌন্দর্য বৃদ্ধির সহায়ক।