বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
বা মুক্তিযুদ্ধ ও আজকের বাংলাদেশ
বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আমাদের দেশপ্রেম
বা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা বাংলাদেশের স্বধীনতা যুদ্ধ
ভূমিকা- একটি জাতির জন্য স্বনির্ভরতা অর্জন ও আত্ম বিকাশের জন্য মুক্ত চেতনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি মুক্তচেতনা বিকাশের সূচনা করে। বাঙালির সুদীর্ঘ ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমগ্র বাঙালি জাতিকে যেমন একত্রিত করে ছিল তেমনি ভাবে দেশ গড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। বাঙালি জাতি কখনো অন্যের অধীনতা মেনে নিতে পারেনি। বারবার পরাধীনতার বেড়াজালে আটকে পড়লেও বাঙালি নিজের সংগ্রামী চেতনার গুনে শেষ পযর্ন্ত স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাঙালি জাতির ইতিহাস ত্যাগের মহিমায় মন্ডিত এবং বীরত্বগাথায় পূর্ণ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। ঐতিহাসিক স্বাধীনতা যুদ্ধে যে চেতনা বা বোধ কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছিল তাকে বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন পরবর্তী সময়ে আধুনিক দেশ গঠনে প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা চিরদিন আমরাই অক্ষুন্ন রাখবো।
মুক্তিযুদ্ধের সোপান- বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ করে আসেনি। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর থেকে পাকিস্তানী শাসক শ্রেণীর নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয় এদেশের মানুষ। শোষণ নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তির জন্য বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ করেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালির মুক্তি চেতনার প্রথম অর্জন। ভাষাকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ জেগে উঠেছিল। রক্তের বিনিময়ে’ বাঙালি অর্জন করেছিল তার মুখের ভাষাকে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করা ছিল বাঙালি চেতনার আরো এক মাইলফলক অজর্ন । পাকিস্তানিদের অন্যায় সিদ্ধান্তের বিপক্ষে এদেশের মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। ১৯৬৬ সালের ৬ দফার মাধ্যমে বাঙালির মুক্তির সনদ ঘোষিত হয়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বাঙালির মুক্তির সংগ্রামকে পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করলেও পাকিস্তানিরা কোনভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়নি।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী হঠাৎ করেই বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অন্যায় আক্রমণ বাঙালিরা মেনে নিতে পারেনি। ছাত্র ,শিক্ষক, কৃষক, কামার, কুমারসহ আপামর জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এ দেশকে স্বাধীন করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা- আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকা এবং শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাঙালিকে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত হতে হয়েছিল। বাঙালির প্রত্যাশা ছিল সুন্দর ও সুস্থ ধারার রাজনীতির চর্চা এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি আনয়ন। মুক্তির আকাঙ্ক্ষা বাংলার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করেছিল। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা লাভের আশায় বাঙালি নতুন করে স্বপ্ন দেখেছিল। আমার দেশের পাট বিক্রি করা টাকায় গড়ে উঠেছে পাকিস্তানের বড় বড় শহর। আমরা সব দিক থেকেই ছিলাম বঞ্চিত, শোষিত। শিক্ষিত সমাজ সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত ছিল । সরকারি চাকরিতে মাত্র ৫ শতাংশ বাঙালি সুযোগ পেত। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাংলাদেশের মানুষকে সার্বিক ভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মুক্তি অর্জনের চেতনা বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধের শক্তি দিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট- ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ শাসনের শুরু হলো সমগ্র ভারতবর্ষে জুড়ে। প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে ১৯৪৭ সালে। ব্রিটিশ শাসনের যাঁতাকলে থেকে সাময়িক রক্ষা পেলেও বাঙালিকে নতুন করে পাকিস্তানিদের শোষণের মুখে পড়তে হয়। পাকিস্তানিরা বাঙালির কণ্ঠরোধ করার জন্য ভাষা কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। পাকিস্তানের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ভাষা বাংলা হলেও উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা করার পরিকল্পনা চলে। বাঙালিরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজপথে মিছিল করে। বাঙালিদের শোষণ করার জন্য পাকিস্তানিরা একের পর এক অন্যায় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাঙালি একত্রিত হয়েছিল। পাকিস্তানের সামরিক শাসক গোষ্ঠী ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়েও বাঙালির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাইনি। নির্বাচনে পরাজয়ের পর তারা নীল নকশার মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে। এর প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।পাকিস্তানিরা বাংলার মানুষকে রাতের আধারে হত্যা করতে শুরু করে।বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে এ দেশের আপামর জনসাধারণ মুক্তি কামনায় স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন- ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলায় বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে।এই সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ববাসীর কাছে জোরালো আহ্বান জানানো হয়। ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ শুরু করে।ভারত সরকার প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করে। ৬ ডিসেম্বর ভারত সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পাকিস্তানিরা কোনভাবেই পরাজয় স্বীকার করতে চায়নি। পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল রাশিয়া। পাকিস্তানী শাসক শ্রেণী পরাজয় নিশ্চিত জেনে এ দেশকে মেধাশূন্য করার নীলনকশায় লিপ্ত হয়েছিল। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, লেখক ,আইনজীবী,বুদ্ধিজীবীদের আলবদর, আলশামস বাহিনী হত্যা করে। স্বাধীন বাংলাদেশকে মাথা তুলে দাঁড়াবার শক্তি শেষ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তারা বুদ্ধিজীবী হত্যা করে। শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৫ টা ১ মিনিটে বর্তমানে রেসকোর্স ময়দানে যৌথ বাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগদীশ সিং অরোরার নিকট পাকিস্তানী বাহিনীর পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। এ সময় মুক্তিবাহিনীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। এ দলিলের মাধ্যমে বাঙালি অর্জন করল তার কাঙ্খিত স্বাধীনতা। সারা বাংলার মানুষ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত করল সমগ্র দেশ। বাঙালি মুক্তির আনন্দে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করল।
মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব ও মননশীলতার বিকাশ- মুক্তির সংগ্রামে বাঙালির আত্মত্যাগ পরবর্তী সময়ে এদেশের মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধ বাঙালিকে শিখিয়েছে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের শুফল। একটি জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকলে সে যে কোনো প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে পারে অতি সহজেই। অত্যাচারের কালো হাত গুড়িয়ে দেয়ার শক্তিও আমরা পেয়েছি মুক্তিযুদ্ধ থেকে। জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে শিক্ষা দেয় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। নিজের অধিকার আদায়ের জন্য আত্ম সচেতন হওয়ার অনুপ্রেরণা দেয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। সর্বাত্মকভাবে বাঙ্গালীর সকল বেদনার মর্মমূলে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রভাব বহমান। স্বাধীন বাংলাদেশে নারীর অধিকার, গণশিক্ষা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে বিস্তারলাভ করেছে। এদেশের কল্যাণে স্বাধীন দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে চিন্তা করেছে। শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি চার্চ আজকে বাংলাদেশে যেভাবে বিকশিত হচ্ছে তার সমস্ত অনুপ্রেরণা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ।
স্বপ্নের বাংলাদেশ- মানুষের জীবন মানে পরিবর্তন এবং সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর হয়ে এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল। তারা বিশ্বাস করতো সমাজের সকল শ্রেণীর ভাগ্যের পরিবর্তন এনে দেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সবাই মিলে দেশের কৃষি, শিল্প, রাজনীতি, অর্থনীতি নতুন করে গড়ে তুলবে। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তৈরি হবে আমাদের সোনার বাংলা। দুঃখ, দারিদ্রহীন সমৃদ্ধ জাতি হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। সকলের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য-চিকিৎসার ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির রোল মডেল হয়ে উঠবে। যেখানে থাকবে না কোন শোষণ, থাকবে না কোনো সংঘাত। মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। প্রতিটি মুহূর্তে স্বাধীনতার মর্মার্থ ধারণ করে এদেশের মঙ্গলের জন্য সবাই কাজ করে চলেছে।
বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা- যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলবার জন্য এদেশের সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল তাদের স্বপ্ন পরিপূর্ণ ভাবে অর্জিত হয় নি। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ সমান ভাবে তার অধিকার ভোগ করতে পারছে না। বর্তমান বাংলাদেশের চিত্র মর্মান্তিক। মানুষকে ঠকিয়ে অর্থ আয় করার চেষ্টা খুব দুঃখজনক। সরকারি অফিসে সেবা নিতে গেলে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। কিছু লোভী এবং স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নানাভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। স্বাধীনতার পর বারবার সামরিক অভ্যুত্থান দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি ধর্মের নামে সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। যারা এদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি তারাই নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি ধ্বংস করার জন্য সদা তৎপর বিদেশি ষড়যন্ত্র গোষ্ঠী। বাংলাদেশের আশাভঙ্গের সংবাদ দেশের যুবসমাজকে বিভ্রান্তির পথে নিয়ে যায়। ঘুষ, দুর্নীতি, বেকারত্ব আইনশৃঙ্খলার অবনতি স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য বিপন্ন করে দিয়েছে।প্রতিটি সরকারের কাছ থেকে আমরা আশাব্যঞ্জক কথা শুনলেও তার শতভাগ বাস্তবায়ন দেখা যায় না। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী চক্র এ দেশের স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করতে সব সময় ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। স্বাধীনদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের অস্তিত্ব মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আহত করে।
বর্তমান বাংলাদেশ বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা- স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় অতিক্রম হয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশে অনেক কিছু অর্জন করলেও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। এদেশকে নতুন ভাবে এগিয়ে নিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। শোষণ ও বৈষম্যহীন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একটি দেশকে গড়ে তোলার জন্য সব থেকে বড় প্রয়োজন দেশপ্রেম। দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম জাগাতে হবে। শিল্প ও সাহিত্য চর্চার মধ্য দিয়ে সমাজের সকল শ্রেণীর মধ্যে প্রগতিশীল মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে। স্বাধীনতার পর ব্যক্তি স্বার্থের কারণে অনেক অর্জন নষ্ট হয়েছে। এই মুহূর্তে আমাদের সব থেকে বড় দরকার ঐক্যবদ্ধ হয়ে পথচলা। সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য আমাদের প্রয়োজন যোগ্য নাগরিক। আধুনিক শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে যোগ্য নাগরিক গড়ে তুলতে হবে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য দক্ষ মানব সম্পদ প্রয়োজন। মহান মুক্তিযুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি নারী মুক্তিযোদ্ধা অসামান্য অবদান রেখেছিল। আজকের স্বাধীন দেশে নারীর ক্ষমতায়ন একান্ত প্রয়োজন। শিক্ষা লাভের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও নারীর সম অধিকার সৃষ্টি করতে হবে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশের মাধ্যমে ধর্মীয় গোঁড়ামি প্রতিহত করতে হবে। বাঙালিকে আধুনিক চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। বর্তমান বাংলাদেশ বিনির্মাণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা একান্ত কাম্য। স্বাধীনতাকে রক্ষা করার পাশাপাশি আমাদের মৌলবাদী রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা ও শিক্ষা ক্ষেত্রের আধুনিকায়ন প্রচলিত ধারণা থেকে মানুষকে প্রগতির পথে নিয়ে যাবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সচেতন সমাজের করণীয়- সচেতন সমাজ বলতে দেশের প্রগতিশীল অংশকেই ধরা হয়। এদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে আধুনিক চিন্তা-চেতনার মানুষের প্রয়োজন সবথেকে বেশি। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের কিছু স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। সময়ের সাথে সাথে ষড়যন্ত্রের ধারা পরিবর্তন করে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রকারীরা ধর্মকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়। এ দেশের সচেতন সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে দেশ গড়ার ক্ষেত্রে।সমাজের সকল স্তর থেকে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করতে হবে । ধর্মকে ব্যবহার করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার সবথেকে সহজ। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে কেউ যেন বাঙালির ভ্রাতৃত্ব নষ্ট করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের জাগরণ ঘটেছিল সেই চেতনা ধরে থাকতে হবে। তরুণ সমাজের মধ্যে কেউ যেন কু-মন্ত্রণা দিয়ে পথভ্রষ্ট না করে সে দায়িত্ব নিতে হবে সমাজের সচেতন শ্রেণীকে। শিক্ষার আলো সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে যে আলোয় দূর হবে সমস্ত অজ্ঞতার অন্ধকার। সমাজের সকল ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও যুব সমাজের দায়িত্ব- বাংলাদেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামে সর্বাগ্রে অংশগ্রহণ করেছে দেশের যুব সমাজ। রাষ্ট্র ও সমাজের বাধা-বিপত্তি অতিক্রমের জন্য যুবসমাজ সম্পদ স্বরূপ। তরুণ সমাজের মেধা রাষ্ট্রকে নতুন করে গড়তে সহায়তা করে। যুবকের দেহ মনে থাকে অফুরন্ত প্রাণশক্তি যার ফসল লাভ করে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। মেধা, মনন,প্রচেষ্টার দ্বারা বাঙালি যুবসমাজ বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। যুবসমাজের দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধ সবার থেকে আলাদা। রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনের দুর্যোগে সব থেকে বড় ভূমিকা রাখে যুবসমাজ। আজকের যুব সমাজ পরাধীন বাংলাদেশ দেখেনি। ইতিহাস যুবসমাজকে দূর অতীতে নিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যুবসমাজকে অনুপ্রাণীতে করে। যুব সমাজকে নৈতিকতার দিক থেকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে উৎসাহ যোগায় মুক্তিযুদ্ধ। যুব সমাজকে দেশের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। নিজেদেশকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। এদেশের আশা আকাঙ্খার প্রতীক হিসেবে যুবসমাজকে সমস্ত দায় গ্রহণ করতে হবে। মহান স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যুবসমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
উপসংহার- স্বাধীনতাহীন কোন জাতি স্বকীয়তা অর্জন করতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালি স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে। স্বাধীনতাকে ধরে রাখতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, স্বাধীনতা অর্জিত হলেই পূর্ণাঙ্গ সাফল্য অর্জিত হবে। এদেশের প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ ঘটানো। মুক্তিযুদ্ধের মহৎ লক্ষ্য তুলে ধরার পাশাপাশি সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার দিক নির্দেশনা দিতে হবে। দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র পৌঁছে দিতে পারলেই সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অগ্রসর হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশ সত্যিকারের লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হবে।