সন্ধি কাকে বলে? সন্ধি কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণসহ আলোচনা কর

Spread the love

সন্ধি কাকে বলে?  সন্ধি কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণসহ আলোচনা কর

বাংলা ভাষায় ব্যবহার উপযোগী অসংখ্য শব্দ রয়েছে। শব্দগুলাের গঠন বৈশিষ্ট্য বিচারে প্রথমত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: মৌলিক শব্দ ও সাধিত শব্দ। মৌলিক শব্দগুলাের কোন প্রকার বিশ্লেষণ করা চলে না। অর্থাৎ এগুলােতে কোন প্রকার প্রত্যয়, উপসর্গ, বিভক্তি যুক্ত হয় নি। তাছাড়া এগুলাে একাধিক শব্দযােগেও গঠিত হয়নি। তাই এ শব্দকে কোন প্রকার ব্যাখ্যা করে বোঝানো যায় না। কিন্তু সাধিত শব্দ বিশ্লেষণ করা যায়। বাংলা ভাষায় সাধিত শব্দ গঠিত হয় চার ভাবে। যথা- সন্ধি, সমাস, প্রত্যয় ও উপসর্গ যোগে।

‘সন্ধি’ অর্থ মিলন। কথা বলার সময় দ্রুত উচ্চারণের কারণে কখনাে কখনাে পাশাপাশি দু’টো ধ্বনি বা বর্ণ একত্রে মিলে যায় কিংবা একটির প্রভাবে অন্যটি পরিবর্তিত হয় বা লােপ পায়।

আশা + অতীত = আশাতীতএ শব্দে বর্ণের মিলন ঘটেছে।
তৎ + মধ্যে     = তম্মধ্যেএ শব্দে পূর্ব বর্ণের পরিবর্তন ঘটেছে।
উৎ + স্থান      = উত্থানএ শব্দে পর বর্ণের পরিবর্তন ঘটেছে।
রাজ+নী         = রাজ্ঞী এ শব্দে পর বর্ণের লােপ হয়েছে।

উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের প্রতি দৃষ্টি রেখে বলা যায় “দ্রুত উচ্চারণের কারণে পরস্পর কাছাকাছি দুটো ধ্বনির মিলন, পরিবর্তন বা বিলােপকে সন্ধি বলে ।”

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “দুটি ধ্বনি একই পদে অথবা দুটি বিভিন্ন পদে পাশাপাশি অবস্থান করলে, দ্রুত উচ্চারণের সময়ে তাদের মধ্যে আংশিক বা পূর্ণভাবে মিলন হয় কিংবা একটি লােপ হয়, অথবা একটি অপরটির প্রভাবে পরিবর্তিত হয়। এরূপ মিলন, লােপ, পরিবর্তনকে সন্ধি বলে।”
সন্ধির উদ্দেশ্য : সন্ধির উদ্দেশ্য মূলত দুটি
১। উচ্চারণকে স্বাভাবিক ও সহজ করা।
২। ধ্বনিমাধুর্য সৃষ্টি করা।

যেমন- সিংহ, আসন শব্দ দুটো পৃথক পৃথক উচ্চারণে যে শ্রম বা আয়াসের প্রয়ােজন হয়, একত্রে উচ্চারণ করলে তার চেয়ে অনেক কম শ্রম বা আয়াসের প্রয়ােজন । আবার “বিদ্যা আলয়’, ‘সৎ জন’ শব্দগুলাে আলাদা উচ্চারণে যত শ্রুতি মধুর হয়, একত্রে ‘বিদ্যালয়, ‘সজ্জন উচ্চারণ করলে তার চেয়ে বেশি শ্রুতিমধুর হয়। তাই সন্ধির মূল উদ্দেশ্য হলাে- উচ্চারণে শ্রমের লাঘব ও শব্দকে শ্রুতিমধুর করা। তবে মনে রাখা দরকার, যেক্ষেত্রে শব্দ শ্রুতিমধুর হয় না সে ক্ষেত্রে সন্ধি করার নিয়ম নেই। যেমন- ‘কচু + আদা + আলু’ শব্দ তিনটি একত্রে করলে হওয়ার কথা কচ্চাদালু। কিন্তু তা আমরা বলি না।

সন্ধির প্রয়ােজনীয়তা : সন্ধি সাধিত শব্দ গঠনের একটি উৎকৃষ্ট পন্থা।
১। উচ্চারণে সময় কম লাগে।
২। ধ্বনিগত মাধুর্য সৃষ্টি হয় এবং ভাষার সাবলীলতা বৃদ্ধি পায়।
৩। উচ্চারণকে দ্রুত ও সহজ করে।
৪। শব্দের আকার ছােট হয়।
৫। এর দ্বারা ভাষার শব্দসম্পদ বৃদ্ধি পায়।
তাই ভাষার সামগ্রিক শ্রীবৃদ্ধি এবং গতি ও শৃঙ্খলার জন্য সন্ধির প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। সংস্কৃত এবং খাঁটি বাংলা যেমন দু’টি পৃথক ভাষা তেমনি তার উচ্চারণ বৈশিষ্ট্যও পৃথক। তাই ভাষাগতভাবে সন্ধি দু’ প্রকার। যথা : সংস্কৃত সন্ধি ও খাঁটি বাংলা সন্ধি। খাঁটি বাংলায় সন্ধি দু’ প্রকার। যথা : ক. স্বরসন্ধি এবং খ. ব্যঞ্জনসন্ধি । সংস্কৃত সন্ধি তিন প্রকার ক. স্বরসন্ধি খ. ব্যঞ্জনসন্ধি এবং গ. বিসর্গসন্ধি। এ ভাগগুলােকে নিচের ছকে দেখানে যায়-

সন্ধি

স্বরসন্ধির সংজ্ঞা : স্বরধ্বনি বা স্বরবর্ণের সাথে স্বরধ্বনি বা স্বরবর্ণের মিলনকে স্বরসন্ধি বলে । যেমন – নর + অধম = নরাধম।

স্বরসন্ধি আবার দু’ প্রকার। যথা- অন্তঃসদ্ধি ও বহিঃসন্ধি।

অন্তঃসন্ধি : শব্দ গঠনের সময় প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের দুটি স্বরের মধ্যে যে সন্ধি হয় তাকে অন্তঃসন্ধি বলে। যেমন – নে + অন = নয়ন; লাে + অন = লবণ;  গৈ + অক = গায়ক ইত্যাদি।

বহিঃসন্ধি : দুটি পৃথক শব্দের সন্নিহিত দুটি ধ্বনির মধ্যে যে সন্ধি হয় তাকে বলে বহিঃসন্ধি । যেমন- বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়; মরু + উদ্যান = মরূদ্যান;জন + এক = জনৈক ইত্যাদি।

ব্যঞ্জনসন্ধির সংজ্ঞা : স্বরধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনসন্ধির, ব্যঞ্জনসন্ধির সঙ্গে স্বরধ্বনির কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনির মিলনকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে। যেমন- উ+ জ্বল = উজ্জ্বল।
বিসর্গসন্ধির সংজ্ঞা : বিসর্গধ্বনি বা বর্ণের সাথে স্বরধ্বনি বা বর্ণের কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনি বা বর্ণের মিলনকে বিসর্গসন্ধি বলে। পুনঃ + অপি = পুনরপি ।

1 thought on “সন্ধি কাকে বলে? সন্ধি কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণসহ আলোচনা কর”

  1. Pingback: বাংলা ভাষার ইতিহাস ও ব্যবহারিক বাংলা সাজেসন্স | Cholo Shekhe

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top