স্বদেশের উপকারে নাই যার মন,
কে বলে মানুষ তারে? পশু সেই জন।
স্বদেশের উপকারে নাই যার মন,
কে বলে মানুষ তারে? পশু সেই জন।
মূলভাব : স্বদেশপ্রেম মানুষের একটি মহৎ আদর্শ। যার মধ্যে স্বদেশপ্রীতি নেই, সে মানুষ হয়েও পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট।
সম্প্রসারিত-ভাব : স্বদেশপ্রেম মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি। এটি মানুষের পরম সম্পদ। স্বদেশপ্রেম ছাড়া কারও মধ্যেই মা, মাটি এবং মানুষকে ভালােবাসার মতাে মহৎ মানবিক চেতনা জাগ্রত হয় না। তাই মনীষীকূল জন্মভূমিকে মায়ের মতাে মর্যাদা দিয়েছেন। মায়ের রক্ত, মাংস, অস্থি, মজ্জা যেমন সন্তানের দেহের অণু-পরমাণুর সাথে মিশে থাকে তেমনি মিশে থাকে জন্মভূমির আলাে, বাতাস, রূপ, রস, গন্ধ তাদের আপাদমস্তকে। স্বদেশপ্রেমের গুরুত্ব বােঝানাের জন্য ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, “স্বদেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ”। স্বদেশের প্রতি গভীর ভালােবাসার পরিচয় ফুটে উঠেছে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ কবিতার প্রতিটি ছত্রে-
“ভায়ের মায়ের এমন স্নেহ, কোথায় গেলে পাবে কেহ?
ওমা তােমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি,
আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি”
যারা দেশকে ভালােবাসে এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত রাখে, প্রকৃতপক্ষে তারাই মানুষ নামের যােগ্য প্রতিনিধি। জগতের মহামানবগণের প্রত্যেকেই ছিলেন স্বদেশভক্ত ও দেশের উপকারে নিবেদিত প্রাণ। বীরপুরুষেরা দেশের জন্য প্রাণ দিতেও কুণ্ঠাবােধ করেন না। যেমন, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে এ দেশের অগণিত মানুষ মাতৃভূমির টানে তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। নিজ মাতৃভূমিকে যে ভালােবাসে না, স্বদেশের জন্য যার কোনাে টান নেই, মানুষ নামের জীব হয়েও সে বিবেক বুদ্ধিহীন পশুর তুল্য। সমাজের চোখে সে ঘৃণার পাত্র। কবি আবদুল হাকিমের ভাষায়-
যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।”