কমা, সেমিকোলন, কোলন ব্যবহারের নিয়ম লেখ
মানুষ মনের ভাব প্রকাশের জন্য কন্ঠস্বরের মাধ্যমে বিভিন্ন বাক্য ব্যবহার করে। বাক্যের বিভিন্ন ভাব সার্থকভাবে প্রকাশের জন্য কন্ঠস্বরের ভঙ্গির তারতম্য হয়ে থাকে। বাক্যের ভাব যথাযথ ভাবে প্রকাশের জন্য বাক্যের মধ্যে কিছু সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা যতি চিহ্ন বা বিরাম চিহ্ন নামে পরিচিত। মনোভাব প্রকাশের সময় অর্থ ভালভাবে বোঝার জন্য উচ্চারিত বাক্যের বিভিন্ন স্থানে বিরতি দিতে হয়। লেখার সময় বাক্যের মধ্যে দিয়ে তা দেখানোর জন্য কিছু সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহৃত হয় যার নামই বিরামচিহ্ন।কথা বলার সময় গলার স্বরের ওঠানামায় বা বলার ঢং এ বক্তার মেজাজ বোঝা যায়।
কমা চিহ্ন ( , )
বাংলা ভাষায় কোন কিছু লেখার সময় আমরা যে যতিচিহ্ন ব্যবহার করি তার মধ্যে অন্যতম কমা চিহ্ন। বাক্যের অভ্যন্তরে বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করা হয় এই কমা চিহ্ন। অল্প বিরতির ক্ষেত্রে অর্থাৎ এক উচ্চারণ করার সমান সময় এখানে বিরতি দিতে হয়। কমা চিহ্ন ব্যবহার করার নিয়ম।
১. একজাতীয় একাধিক বাক্য পাশাপাশি ব্যবহৃত হলে কমা প্রয়োগে তাদের আলাদা করতে হয়। যেমন- সে বাড়িতে গেল, বই নিল, তারপর বেরিয়ে এলো।,
২. বাক্যে একই পদের একাধিক শব্দ পাশাপাশি ব্যবহৃত হলে তাদের মধ্যে একটি বা একাধিক কমা ব্যবহার করে একজাতীয় পদকে পৃথক করা হয়। যেমন- সে, তুমি, আমি মিলে কাজ করব। এলাম, দেখলাম, জয় করলাম রাম, রহিম, জব্বার পরম বন্ধু।
৩. একই পদ বারবার ব্যবহারের মাঝে কমা বসে । যেমন- আমি ভাত খাবো, খাবো, খাবো।
৪. সম্বোধনের পর কমা বসে। যেমন- প্রিয় শিক্ষার্থীরা, চুপ করে ক্লাসে বস।
৫. উদ্ধৃতি চিহ্নের আগে কমা বসে। যেমন- আমি বললাম, ‘তারা ভালো নেই’।
৬. তারিখ লিখতে কমা বসে। যেমন- পহেলা ফাল্গুন,১৪২৭ বঙ্গাব্দ।
৭. যৌগিক ও জটিল বাক্যের ছোট ছোট বাক্যে কমা দিয়ে আলাদা দেখানো হয়।যেমন- লোকটি দরিদ্র, কিন্তু অত্যন্ত সৎ।
৮. নামের শেষে ডিগ্রী থাকলে কমা বসে। যেমন- ডঃ আনিসুজ্জামান,এমএ,পিএইচডি।
সেমিকোলন( ; )
সেমিকোলন বা অর্ধচ্ছেদ হলো বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত এক ধরনের বাক্য অন্তর্গত চিহ্ন। মনোভাব প্রকাশের বেলায় একটিমাত্র ভাব শেষ হয়ে সন্নিহিত ভাবের নতুন বাক্য শুরু করতে চাইলে একটু থামতে হয় এবং সেখানেই সেমিকোলন ব্যবহার করতে হয়।
১. একাধিক স্বাধীন বাক্যকে একটি বাক্যে লিখতে সেগুলোর মাঝখানে সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন- তিনিই বসে বসে ঘটনাটি দেখছিলেন; এর শেষ কোথায় হয়।
২. বক্তব্য স্পষ্ট করার জন্য সমজাতীয় বাক্য পাশাপাশি প্রতিস্থাপন করলে সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন- সে কাজ বোঝেও না; করতেও পারে না;অন্যকে দিয়ে করাতেও পারে না।
৩. দুটি বা তিনটি বাক্য যোজক শব্দের সাহায্যে যুক্ত না হলে সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন- আগে নিজের কাজ করো; তারপর অন্য দিকে খেয়াল দাও।
৪. যেসব বাক্যে ভাব সাদৃশ্য আছে তাদের মধ্যে সেমিকোলন বসে। যেমন- দিনটি আমার একেবারেই ভালো নয়; মাঝে মাঝে শরীর খারাপ লাগছে।
৫. যেসব যোজক বৈপরীত্য প্রকাশ করে তাদের আগের সেমিকোলন বসে। যেমন- সে অপরাধ করেছে; যে জন্য শাস্তি পাবে।
কোলন (:)
১. বাক্যে কোন প্রসঙ্গ শুরু হওয়ার পূর্বে কোলন চিহ্ন বসে। যেমন- শপথ করছি : কাজটি শেষ করবই।
২. ধারাবাহিক উপস্থাপনার ক্ষেত্রে কোলন চিহ্ন বসে। যেমন- হাতের ডান দিক থেকে: জলিল,সাইমা, রাহি উত্তর করবে।
৩. প্রশ্ন রচনায় কোলন বসে। যেমন- সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন লেখ : টীকা লেখ :
৪. চিঠিপত্র ও বিভিন্ন রকম ফরমে কোলন বসে । যেমন- নাম: ,পিতার নাম: ,বিষয়: ,তারিখ :।
৫. পরিপূর্ণভাবে সময় প্রকাশ করতে কোলন বসে। যেমন- ৭:২০ মিনিট, ৩:১৯ মিনিট।
৬. বাক্যে উদ্ধৃতি চিহ্নের আগে কোলন ব্যবহৃত হয়। কবি বলেছেন: দেশের জন্য প্রাণ দেব তবু মান দেব না।
৭. নাটকের চরিত্রের পরে ও সংলাপের আগে কোলন বসে। যেমন-
সিরাজ : যে কোন ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।
উমিচাঁদ : আমরা প্রস্তুত, জাহাপনা।
Pingback: বাংলা ভাষার ইতিহাস ও ব্যবহারিক বাংলা সাজেসন্স | Cholo Shekhe
good