বাক্য বিশ্লেষণ কাকে বলে? বাক্য বিশ্লেষণের পদ্ধতি উদাহরণসহ উপস্থাপন কর

Spread the love

বাক্য বিশ্লেষণ কাকে বলে?  বাক্য বিশ্লেষণের পদ্ধতি  উদাহরণসহ উপস্থাপন কর

মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশের জন্য অর্থবোধক শব্দ দ্বারা বাক্য গঠনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশের সুযোগ লাভ করে। বাক্য শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ হলো ‘কথিত বিষয়’। ভাষার মূল উপাদান হলো বাক্য এবং বাক্যের মূল উপাদান হচ্ছে শব্দ। সার্থক পদসমষ্টি যখন অর্থের দ্যোতনা সৃষ্টি করে তখন তাকে বাক্য বলা হয়। বাক্য দ্বারা অর্থের দ্যোতনা সৃষ্টি করা প্রধান কাজ। শব্দের অর্থই হল তার শক্তি। তাই অর্থই বাক্যের সার্থকতা সৃষ্টি করে।

বাক্যের অন্তর্গত উদ্দেশ্য, বিধেয়, উদ্দেশ্য প্রসারক এবং বিধেয়ের প্রসারক অংশকে পৃথক করে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় বা প্রকাশ করার নামই বাক্য বিশ্লেষণ।

যেমন- সন্তান বাৎসল্য পিতা পৃথিবীর সকল বস্তু অপেক্ষা নিজ সন্তানকে স্নেহ করেন।
এ বাক্যে-
ক) উদ্দেশ্য———— পিতা।
খ) উদ্দেশ্যের প্রসারক— সন্তান বাৎসল্য।
গ) বিধেয়————– স্নেহ করেন।
ঘ) বিধেয়ের প্রসারক—– পৃথিবীর সকল বস্তু অপেক্ষা নিজ সন্তানকে।

বাক্য বিশ্লেষণ এর নিয়ম-
১. বাক্য বিশ্লেষণের সময় সরল, জটিল, যৌগিক বাক্য উল্লেখ করতে হবে।
২. সরল বাক্যে উদ্দেশ্য, বিধেয় ও প্রসারক পদগুলো উল্লেখ করতে হবে।
৩. জটিল বাক্যে প্রধান ও আশ্রিত খণ্ড বাক্যের পদগুলো উল্লেখ করতে হবে।
৪. যৌগিক বাক্যে জটিল বাক্যের মত সকল প্রধান বাক্যের পদগুলো উল্লেখ করতে হবে।

সরল বাক্যের বিশ্লেষণ

মমতাময়ী মা অতি যত্ন সহকারে সন্তানকে ভালোবাসেন।
সরল বাক্যে যথার্থ বিশ্লেষণ করলে বাক্যের প্রতিটি অংশকে পাওয়া যাবে-
ক) উদ্দেশ্য—————মা ।
খ) উদ্দেশ্যের প্রসারক —-মমতাময়ী।
গ) বিধেয়—————–সন্তানকে ভালোবাসেন।
ঘ) বিধেয়ের প্রসারক——-অতি যত্ন সহকারে।

জটিল বা মিশ্র বাক্যের বিশ্লেষণ

যদি বৃষ্টি সময় মত না হয়,তবে ফসল ভালো হবে না।
অপ্রধান খণ্ড বাক্যপ্রধান খণ্ড বাক্য

প্রধান খণ্ড বাক্য-  তবে ফসল ভালো হবে না।
ক) উদ্দেশ্য————- ফসল।
খ) উদ্দেশ্যের প্রসারক —- তবে।
গ) বিধেয়—————হবে না।
ঘ) বিধেয়ের প্রসারক—–ভালো।

অপ্রধান খণ্ড বাক্য – যদি বৃষ্টি সময় মত না হয়।
ক) উদ্দেশ্য————- বৃষ্টি।
খ) উদ্দেশ্যের প্রসারক —- যদি।
গ) বিধেয়————— না হয়।
ঘ) বিধেয়ের প্রসারক—– সময় মত।

যৌগিক বাক্য বিশ্লেষণ

যৌগিক বাক্যে একাধিক স্বাধীন বাক্য অব্যয় পদ দ্বারা সংযুক্ত থাকে। যৌগিক বাক্য বিশ্লেষণ এর ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে-
১. স্বাধীন বাক্যগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে।
২. সংযোজক অব্যয়গুলোকে চিহ্নিত করতে হবে।
৩. প্রতিটি স্বাধীন বাক্যকে সরল বাক্যের মত বিশ্লেষণ করতে হবে।
যেমন- লোকটি খুব পরিশ্রমী ও মেধাবী।
প্রথম স্বাধীন বাক্য- লোকটি খুব পরিশ্রমী।
দ্বিতীয় স্বাধীন বাক্য- লোকটি খুব মেধাবী।

প্রথম স্বাধীন বাক্য বিশ্লেষণ-  লোকটি খুব পরিশ্রমী।
ক) উদ্দেশ্য————- লোকটি।
খ) উদ্দেশ্যের প্রসারক —- ০ বা নেই।
গ) বিধেয়————– পরিশ্রমী।
ঘ) বিধেয়ের প্রসারক—– খুব।

দ্বিতীয় স্বাধীন বাক্য-  লোকটি খুব মেধাবী।
ক) উদ্দেশ্য————- লোকটি।
খ) উদ্দেশ্যের প্রসারক —- ০ বা নেই।
গ) বিধেয়————– মেধাবী।
ঘ) বিধেয়ের প্রসারক—– খুব।

বাংলা ব্যাকরণে বাক্য বিশ্লেষণ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যথার্থ বাক্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে শব্দের অর্থ ও বাক্যের গাঁথুনি সম্বন্ধে পরিপূর্ণ ধারণা জন্ম নেয়। বাক্যের অর্থ সহজ ভাবে বুঝার জন্য বাক্য বিশ্লেষণ প্রয়োজন। বাক্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভাষাকে সহজে আয়ত্ত করা যায়।

1 thought on “বাক্য বিশ্লেষণ কাকে বলে? বাক্য বিশ্লেষণের পদ্ধতি উদাহরণসহ উপস্থাপন কর”

  1. Pingback: বাংলা ভাষার ইতিহাস ও ব্যবহারিক বাংলা সাজেসন্স | Cholo Shekhe

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top