মাগধী প্রাকৃতের সাথে বাংলা ভাষার সম্পর্ক নির্ণয় কর

Spread the love

মাগধী প্রাকৃতের  সাথে বাংলা ভাষার সম্পর্ক নির্ণয় কর

বাংলা ভাষার উদ্ভব সম্পর্কে বিভিন্ন পন্ডিত ভিন্ন ভিন্ন মত পরিবেশন করেছেন। এই মতবাদের মধ্যে শুধু দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য নয় বরং তথ্য ও বিচার পদ্ধতিগত পার্থক্য রয়েছে। মাগধী প্রাকৃতের সাথে বাংলা ভাষার সম্পর্ক নিয়েও পণ্ডিতগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

স্যার জর্জ গ্রীয়ারসন মত দিয়েছেন যে, মাগধি প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটেছে। এ মতকে সমর্থন করেছেন ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় । তাদের অভিমত এই যে, বাংলা ভাষা আসামি, উড়িয়া এবং বিহারি ভাষাগুলাের সহােদর স্থানীয় এবং এগুলাের মূল একই। এ মন্তব্যের পক্ষে যুক্তি এই যে, বাংলাতে বর্ণরূপে তিনটি ‘শ’, ‘ষ’, স থাকলেও উচ্চারণে মূলধ্বনিগত রূপ একটিই ‘শ’। উচ্চারণের ক্ষেত্রে সে, আঁষ, আঁশ শব্দে তালব্য ‘শ’-এর উচ্চারণ করা হলেও তিনটি স্থানে দন্ত্য, মূর্ধন্য ও তালব্য বর্ণ রয়েছে। মাগধি প্রাকৃতেরও সাধারণ লক্ষণ অনুরূপ। মাগধি প্রাকৃতে কর্তায় ‘এ’ কার হয়। বাংলাতেও কোন কোন স্থানে কর্তায় ‘এ’ কার দেখা যায়। যেমন- লােকে বলে। বাংলায় ‘মড়া’ শব্দ মাগধ প্রাকৃতের ‘মড়’ থেকে আসতে পারে। এগুলাে বাংলা ভাষা ও তার সহােদরা ভাষার পক্ষে মাগধি প্রাকৃত থেকে উৎপন্ন হবার প্রধান প্রমাণ মনে করা হয়েছে। 

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এই প্রমাণ ও অভিমত যুক্তিসম্মত মনে করেননি। তিনি Indian Historical Quarterly-তে প্রকাশিত এবং ‘Magdhi Prakrit and Bengali’-তে তার স্বতন্ত্র মত দিয়েছেন। নিচে সে বিষয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মত উল্লেখ করা হল :

মাগধি প্রাকৃতে যেমন তিনটি উষ্ম বর্ণ স্থানে ‘শ কার হয়, সেরূপ ‘র’ স্থানে ‘ল হয়। বাংলা সহোদর স্থানীয়া কোন ভাষাতেই এই ‘শ’ কার ও ‘র’ স্থানে ল’ কার দুই পরিবর্তন এক সাথে দেখা যায় না।যে অল্প কয়টি স্থানে ‘র’ এর জায়গায় ‘ল’ কে দেখা যায়, সেগুলো মাগধি ভিন্ন অন্য প্রাকৃতের ভেতর দিকে বাংলায় আসতে পারে। যেমন- বাংলা হলুদ (বা হলদি)- প্রা. হল হলদ্দী-  প্রা.ভা. আ. হল হরিদ্রা। কেবল ‘শ’ কারত্ব দেখে ধ্বনির দিক থেকে বাংলাকে মাগধি প্রাকৃত থেকে উৎপন্ন বলা চলে না।উড়িয়া এবং বিহারিতে স-কার এবং আসামিতে ‘হ’ কার দেখা যায়। এ ছাড়া বাংলার পশ্চিম প্রান্তের ভাষায় ‘স’ এর উচ্চারণ প্রচলিত আছে। বাংলার বাইরে হিন্দি, নেপালি, গুজরাটি, সিন্ধি, পাঞ্জাবি প্রতি ভাষাতে শ, ষ, স স্থানে কেবল ‘স’ ধ্বনি আছে । অশােকের প্রাচ্য অনুশাসন লিপিতে এবং পালিতে একই ‘স’ কারের অস্তিত্ব, প্রাচীন প্রাচ্য, প্রাকৃতে ‘স’ ধ্বনি প্রমাণিত করে । শ-কারত্ব ও ‘ল’- কারত উভাই কেবল রামগড়ের সুতনুকা লিপিতে দেখা যায়। সুতরাং বাংলা ভাষার শ-কারত্ব অনেক পূর্ববর্তী যুগে উৎপন্ন হয়েছে।পূর্ববঙ্গ ও আসামের উপভাষায় শ,ষ,স স্থানে হ-কার আরও পরবর্তীকালের ধ্বনি পরিবর্তন। 

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কর্তৃকারকে ‘এ’ কার সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন , “মাগধি প্রাকৃতের এটি বিশেষ লক্ষণ নয়। আশোকের প্রাচ্য অনুশাসনে এবং অর্ধ মাগধিতেও এই ‘এ’ কার দেখিতে পাওয়া যায়। কর্তৃকারকে ‘এ’ বিভক্তি মূলে করণ কারকের ‘এ’ কার থেকে আগত।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ  এর মতে, বাংলা এবং এর সহোদর ভাষায় দু’একটি শব্দ মাগধি প্রাকৃত থেকে ঋণ হিসেবে নেয়া হলেও মাগধি প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়নি।

1 thought on “মাগধী প্রাকৃতের সাথে বাংলা ভাষার সম্পর্ক নির্ণয় কর”

  1. Pingback: বাংলা ভাষার ইতিহাস ও ব্যবহারিক বাংলা সাজেসন্স | Cholo Shekhe

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top