কৃষিকাজে বিজ্ঞান

Spread the love

বাংলাদেশের কৃষিকাজে বিজ্ঞানের অবদান

কৃষিকাজে বিজ্ঞান 

                 বা বাংলাদেশের কৃষিকাজে বিজ্ঞানের অবদান

ভূমিকা-      চাষী খেতে চালাইছে হাল,  তাঁতি বসে  তাঁত বোনে ,জেলে ফেলে জাল

                    বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার, তারি পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার

                                                                                                                           ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য গ্রহণ করতে হয় আর এই খাবারের অধিকাংশই কৃষি কাজের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। কৃষির সঙ্গে মানুষের জীবনের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সভ্যতার শুরু থেকেই কৃষির ক্রমোন্নতি মানুষকে খাদ্য চাহিদা মেটাতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে। কৃষির বিবর্তন মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা মানুষের ব্যবহার্য সকল ক্ষেত্রেই কোনো-না-কোনোভাবে অবদান রেখে চলেছে।  কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান অভূতপূর্ব। প্রাচীন কৃষি পদ্ধতি আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে আধুনিক কৃষি বিজ্ঞান যা হয়তো আমরা শত বছর পূর্বেও চিন্তা করতে পারেনি।বাংলাদেশের ৮০% মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত। এদেশের কৃষকরাই জাতির মেরুদন্ড।কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সম্পর্ক। আধুনিক যুগে কৃষি বিজ্ঞানের অনন্যসাধারণ উন্নতির ফলে বাংলাদেশের  কৃষি খাতে এসেছে  বৃহৎ পরিবর্তন। 

কৃষির গুরুত্ব- পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীন পেশা কৃষি কাজ। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশ  কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে কৃষিকাজে বৃহৎ পরিবর্তন এসেছে। কৃষির আধুনিকায়ন দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে।বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ।  কৃষির সঙ্গে এদেশের বৃহৎ জনসংখ্যার ভাগ্য জড়িত।  কৃষি  উন্নত হলে কৃষকেরও  উন্নতি হবে। কৃষি কাজ বাদ দিয়ে কোন ভাবে এ দেশের অর্থনীতির স্থায়ী উন্নতি প্রত্যাশা করা যাবে না। দেশকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই কৃষি ও কৃষককে গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে  আমাদের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা মেটাতে কৃষিতে আধুনিকায়ন এর কোনো বিকল্প নেই। দিনের-পর-দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে কৃষি জমি দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। অল্প জমিতে অধিক ফসল ফলানোর মধ্যদিয়েই দেশের সামগ্রিক মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব। অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও বিজ্ঞান ভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহারের  প্রয়াস বৃদ্ধি করতে হবে।

প্রাচীন কৃষি পদ্ধতি- মানুষের সঙ্গে কৃষি কাজের সম্পর্ক অতি প্রাচীন। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। কৃষিকাজের প্রাচীন সহায়ক হিসেবে ব্যবহার হতো গরু,মহিষ, লাঙল,জোয়াল,কাস্তে  প্রভৃতি। জমিতে বীজ বপনের পর আকাশের দিকে চেয়ে থাকতে হতো কখন বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি যদি সময় মত না হয় তাহলে  ফসল ভালো হতো না । বীজ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও গুনাগুন বিচার বিশ্লেষণের কোন পদ্ধতি ছিল না ফলে নিম্নমানের  বীজ ব্যবহার করে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই ধরনের ফসল বারবার চাষ করাতে জমির উৎপাদন ক্ষমতা আস্তে আস্তে কমে যায়। কোন ফসলের কী পরিমাণ বাজার চাহিদা রয়েছে সেটি পরিমাপের কোন পদ্ধতি  ছিল না।কোন কোন অঞ্চলে যথাসময়ে বৃষ্টির অভাবে  ফসল নষ্ট হয়েছে ফলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।  কৃষি কাজে ব্যবহৃত সহায়ক উপাদান সকলের জন্য খুব সহজ সাধ্য ছিলোনা। একই সময়ে সকল কৃষক প্রায় একইরকম ফসল উৎপাদন করতো ফলে বাজার মূল্য খুব ভালো পাওয়া যেত না। প্রাচীন কৃষি পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের হার খুবই সীমিত ছিল। প্রাচীন কৃষি পদ্ধতিতে কৃষক অনেক বেশি পরিশ্রম করতো কিন্তু ফসল কম উৎপাদিত হত।

কৃষি ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক-   প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল একটি  ধারা কৃষি কাজ। বিজ্ঞানের কাজ কোন কিছু সম্পর্কে নতুন নতুন  জ্ঞান পরিবেশন করা।  কৃষিকাজ সম্পর্কে বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আবিষ্কার উপহার দিচ্ছে। কৃষি খাত সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা প্রভৃতি কাজে কৃষি বৃহৎ ভূমিকা রাখছে। চাষ পদ্ধতি, উন্নত বীজ বাছাই করা, জমি প্রস্তুত, ফসল রোপণ ও সংগ্রহ করার নতুন নতুন পদ্ধতি কৃষি কাজে  যুক্ত হয়েছে। গবেষণার একটি বৃহৎ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে কৃষিবিজ্ঞান। আমাদের মত জনবহুল দেশের সকল মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য কৃষিকাজে বিজ্ঞান ব্যবহারের  কোন বিকল্প নেই।একটা সময় কৃষিকাজ বিবেচনা করা হতো শুধুমাত্র নারীদের কাজ, এই ধারণা থেকে সমগ্র পৃথিবী একেবারে সরে এসেছে। বর্তমানে একটি দেশের পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে কৃষি ব্যবস্থাপনা। উচ্চ ফলনশীল বীজ উৎপাদন, নানা রকম সার আবিষ্কার, নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার, চাষ পদ্ধতি সহজীকরণ বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থাপনায় বৃহৎ অবদান রাখছে। বিজ্ঞান গুরুত্বের সঙ্গে কৃষি গবেষণার  কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

কৃষি কাজের  আধুনিকায়নে বিজ্ঞানের প্রভাব- পৃথিবীর এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে বিজ্ঞানের প্রভাব পড়েনি। কৃষি আমাদের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই কৃষিতেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। খাদ্যের জন্য মানুষকে পুরোপুরিভাবে কৃষির উপর নির্ভর করতে হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর ইউরোপের শিল্প বিপ্লব কৃষিক্ষেত্রে এনে দিয়েছে নতুনত্বের জোয়ার।কৃষিকাজে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি, চাষ পদ্ধতি আবিষ্কৃত হওয়ায় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন কৃষককে গরু-মহিষ, লাঙ্গল, জোয়াল এর উপর নির্ভর করতে হয় না।পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর ব্যবহার করে সহজেই জমি চাষ উপযোগী করা যায়। কীটনাশক ব্যবহারের  মাধ্যমে ফসলের ক্ষতি কমানো সম্ভব। নতুন নতুন সার আবিষ্কৃত হয়েছে যা  মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। গোবর সার, কম্পোস্ট সার ও সবুজ সার এর পাশাপাশি ইউরিয়া টিএসপি, এএসপি ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে কৃষি ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টিপাতের অভাবে ফসল যেন নষ্ট না হয় সেজন্য আধুনিক সেচ পদ্ধতি ফসল উৎপাদনে বৃহত্তম  ভূমিকা রাখছে। ভালো ফলাফলের জন্য ভালো বীজের বিকল্প নেই। কৃষি গবেষণা কেন্দ্র উন্নতমানের বীজ উৎপাদন  করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি মনোযোগী।  বিজ্ঞানের এ সাফল্য দেশের প্রায় সব ধরনের ফল ফলাদি ও কৃষি পণ্যের ক্ষেত্রে সাধিত হয়েছে।  কৃষিজমিতে পোকামাকড় দমন ও নির্মূল করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটেছে অন্য সকল ক্ষেত্রের মতো। উপকারী পোকা রক্ষা করা এবং ক্ষতিকর পোকা দমন করার নানা রকম কৌশল আবিষ্কার করেছে আধুনিক কৃষি বিজ্ঞান। 

উন্নত বিশ্বের কৃষি উপকরণ- উন্নত বিশ্বের কৃষি পুরোপুরি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর। জমি কর্ষণ করা, বীজ রোপন,  সেচ কার্য, ফসল কাটা, মাড়াই ও বাছাই সহ সকল ধরনের কাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফসল কাটার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রপার , ফসল বাধার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বাইন্ডার,মাড়াই করার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে থ্রেশিং মেশিন, সার ছড়ানোর জন্য  ব্যবহার করা হয় ম্যানিওর স্প্রে। চীন, জাপান, আমেরিকা, কানাডা প্রভৃতি উন্নত বিশ্ব দিনে ১০০ একর জমি চাষ করতে একটি ট্রাক্টর যথেষ্ট। অতি শীত প্রধান দেশে গ্রীনহাউজ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তারা গ্রীন রুম তৈরি করছে এবং সেখানেই কৃষি  ফসল উৎপাদন করছে।আফ্রিকার মত উষ্ণ অঞ্চলের যেমন ফসল হচ্ছে তেমনি ভাবে মধ্যপ্রাচ্যের মত মরু অঞ্চলেও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সবকিছু সম্ভব হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সহায়তায়। জমিতে সার ব্যবহারের পূর্বে মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। কোন সার কতটুকু দরকার সেটি নির্ভর করে মাটির গুণাগুণের উপর। 

বাংলাদেশের কৃষি কাজে বিজ্ঞান- পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের কৃষিতে লেগেছে বিজ্ঞানের ছোঁয়া।কৃষি উপকরণ বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রূপ লাভ করেছে। ছোট-বড় অনেক শিল্প গড়ে উঠেছে যারা আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি নিজেরা যেমন উৎপাদন করছে তেমনি কিছুসংখ্যক অন্য দেশ থেকে আমদানি ও করছে। ভোর না হতেই লাঙ্গল জোয়াল কাঁধে করে কৃষককে আর মাঠে যেতে হয় না।  ট্রাক্টর ব্যবহারের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে একরের পর একর জমি  চাষ হয়। শ্যালো মেশিন ও সাবমারসিবল পাম্প ব্যবহার করে প্রয়োজনমতো পানি পাওয়া যায় তাই পানির অভাবে ফসল আর নষ্ট হয় না। বীজ বপনের ব্যবহার করা হয় ড্রামসিডার। হাইব্রিড জাতীয় বীজ  আবিষ্কারের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আর গ্রামের ধান  থেকে চাল বের করার জন্য  ঢেঁকি ব্যবহার করা হয় না। চাল থেকে ধান এবং ভুট্টা,গম থেকে আটা তৈরির জন্য অটো মেশিন আভিষ্কার হয়েছে। ফসল সংরক্ষণের জন্য  আধুনিক হিমাগার ব্যবস্থা বেশ কার্যকরী। একই জমিতে একাধিক ফসল চাষ করার প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষক অনেক বেশি আর্থিক ভাবে সুবিধা পাচ্ছে। লবণাক্ত মাটিতে  লবণ সহনীয় বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। বায়োটেকনোলজি ব্যবহারের ফলে দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

 বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি- বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি কৃষি খাত। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। টেকসই কৃষি উন্নয়নের ফলে কৃষিক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহ দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।বিশ্বে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ চতুর্থ ও আলু উৎপাদনে সপ্তম স্থানে রয়েছে।  এ বছর আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ টন।ভুট্টা উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ টন। প্রতি বছর সরকারের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায়  ফসল অনেক বেশি উৎপাদন হচ্ছে।  পৃথিবীতে আম উৎপাদনে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে রয়েছে এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে রয়েছে। প্রতি বছর সবজি-ফলমূল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। প্রচলিত কৃষি ফসলের মধ্যে বাংলাদেশ সীমাবদ্ধ নেই। বিদেশি ফসল বিশেষত ড্রাগন, মাল্টা  চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছে। কৃষি নীতি প্রণয়নের মধ্য দিয়ে প্রতি বছর সরকার কৃষি কাজকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন। 

বাংলাদেশের  কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ব্যবহারে বৃদ্ধিতে করণীয়- বিজ্ঞানের এই অগ্রযাত্রা বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে অব্যাহত থাকলে অচিরেই আমরা ফসল উৎপাদনে শ্রেষ্ঠত্ব দখল করব। শ্রেষ্ঠত্বের জন্য প্রয়োজন কৃষিকাজে ব্যাপকভাবে বিজ্ঞানের ব্যবহার করা। এক্ষেত্রে সরকারের যেমন একটি পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন একই সঙ্গে কৃষকদের সচেতন হতে হবে। কৃষক সমাজের মধ্যে শিক্ষার আলো বিস্তার ঘটানো সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কুসংস্কার, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা, অন্ধবিশ্বাস থেকে কৃষকদের মুক্ত হতে হবে। কৃষি সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের  আধুনিক কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষককে পরামর্শ দিতে হবে । সময়ে সময়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিদিন আমাদের দেশে প্রায় সাত হাজার নতুন মুখ জন্মগ্রহণ করে । প্রতিনিয়ত খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু ফসলি জমি বৃদ্ধি পাচ্ছে না। আধুনিক কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে অল্প জমিতে অধিক ফসল ফলাতে পারলে খাদ্য সমস্যা হ্রাস করা সম্ভব। আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে গেলে কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই।

বাংলাদেশের কৃষির আধুনিকায়নে  গণমাধ্যমের ভূমিকা- বাংলাদেশের কৃষি আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। বাংলাদেশের কৃষি সম্পর্কিত একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের বাস্তবসম্মত ধারণা দেওয়া হয়। শস্য, প্রাণিসম্পদ ও বন বিভাগ কৃষি খাতের অন্তর্ভুক্ত। একটি পুকুরে মাছ এবং পুকুরের ওপর হাঁস পালন করা হচ্ছে, বড় বড় পোল্ট্রি খামার গড়ে উঠছে, গরু-ছাগলের বৃহদায়তন খামার দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষিত যুব সমাজকে কৃষি কাজে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।গণমাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কিভাবে নতুন নতুন পদ্ধতিতে ফসল চাষ করা হচ্ছে। সফল কৃষককে গণমাধ্যমে দেখে অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছে। গরু ছাগল পালনের প্রাচীন প্রথা পরিহার করে আধুনিক প্রথার  খামার পদ্ধতি সম্পর্কে  প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, চ্যানেল আই, দীপ্ত টিভি, বাংলাভিশন, পশ্চিমবঙ্গের ইটিভি সহ বিভিন্ন দৈনিক ও পাক্ষিক পত্রিকায় কৃষি সম্পর্কিত তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। মাশরুম, ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম এর মত বিদেশি সবজি উৎপাদন সম্পর্কে আমরা জানতে পারছি গণমাধ্যমের  কল্যাণে।বিভিন্ন ধরনের ফুল বিশেষত্ব গ্লাডিউলাস, টিউলিপ, অর্কিড চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায় গণমাধ্যমে ।নতুন  জাতের ধান উৎপাদিত হলে গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা তা জানতে পারি। সবিশেষ বলা যায় গণমাধ্যম বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিকায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। 

ডিজিটাল কৃষি পদ্ধতি- বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষি উৎপাদনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। তথ্য প্রযুক্তির বিকাশে বাংলাদেশের কৃষি পদ্ধতিতে বিরাট পরিবর্তন এনেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদের সহায়তার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে কৃষকরা কৃষি সম্পর্কে যেকোনো তথ্য  জানতে পারবে। কৃষি বাতায়ন এর মাধ্যমে কৃষকদের প্রশ্নের  জবাব দেওয়া হয়। ৩৩৩১ নম্বরে ফোন করে কৃষক বন্ধুরা  পরামর্শ নিতে পারবেন। কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩ নম্বরে ফোন করলে চাষাবাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সহায়তা পাবে। কখন কোন সার দিতে হবে এজন্য ‘সার সুপারিশ নির্দেশনা’ নামে  কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি তথ্য বাতায়ন রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকের ফসল যেন নষ্ট না হয় সেজন্য সরকার ‘কৃষি আবহাওয়া পোর্টাল’ নামে একটি তথ্য সহায়তা বিভাগ খুলেছে।এই পোর্টালের মাধ্যমে  কৃষকদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস  জানানো হয়। কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে কৃষকরা ঘরে বসেই সকল সমস্যার সমাধান পাচ্ছে।

উপসংহার- কৃষি সম্পর্কে কৃষকদের প্রাচীন ধারণা পরিহার করে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। কৃষকদের ইচ্ছা এবং সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন আধুনিকায়ন হবে। কৃষি সম্পর্কে যাদের উচ্চ শিক্ষা রয়েছে তাদেরকে  গবেষণায় আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। কৃষি উন্নতি হলে দেশের উন্নতি হবে। কৃষি উন্নয়ন ঘটাতে হলে বিজ্ঞানের বিচিত্র ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের  ব্যবহার নিশ্চিত হলে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top