বাংলা ভাষায় অনার্য ভাষার প্রভাব সংক্ষেপে লেখ

Spread the love

বাংলা ভাষায় অনার্য ভাষার প্রভাব সংক্ষেপে লেখ

আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫०० অব্দে আর্যরা ভারতে প্রথম এসেছিল বলে কেউ কেউ মত প্রকাশ করেছেন। আর্যরা মূলত ইরান, মধ্য এশিয়া থেকে বিভিন্ন দলে দলে বিভক্ত হয়ে পূর্ব আফগান, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত দেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব, কাশমিরে উপনীত হয় । কালক্রমে তারা পূর্ব পাঞ্জাব ও ভারতে প্রাধান্য বিস্তার করে । আর্যারা এদেশীয় স্থায়ী বাসিন্দাদের অনার্য বলে অভিহিত করে । অনার্যদের ভাষা ও সাহিত্য দ্বারা আর্য ভাষা ও সংস্কৃতি প্রতাবান্বিত হয় । এই ভাবেই বাঙালি ও বাংলা ভাষার গোড়াপত্তন হয়েছিল।

বহিরাগত আর্যরা বাংলার জনগােষ্টীর বৃহত্তম অংশ গড়ে তুলেছিল। আর্যদের হাতে দেশীয় লােকদের পরাজয় ঘটলেও তাদের কিছু প্রভাব বিজয়ী আর্যদের পড়েছিল । ফলে আর্য ভাষা থেকে উদ্ভূত বাংলা ভাষায় আর্যদের কিছু প্রভাব রয়েছে ।সমগ্র বাঙালি জনগােষ্ঠিকে দু‘ভাগে ভাগ করা যায়।(ক) অনার্য নরগোষ্ঠি,(খ) আর্য নরগোষ্ঠি । অনার্য নরগোষ্ঠি বাঙালি জীবনের মেরুদন্ড।এই দেশে আর্য ভাষা প্রচলিত হওয়ার আগে যেসব ভাষা এখানে প্রচলিত ছিল সেগুলোর মধ্যে অষ্ট্রিকগোষ্ঠির ভাষা কোল,সাঁওতাল,খাসিয়া,জুয়াং,মোন,সবর প্রভৃতি ভাষা। ড.সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে- অনার্য ভাষার চারটি নাম দিয়েছেন।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অষ্ট্রিক বংশ,দ্রাবিড় বংশ।

পশ্চিম এশিয়া থেকে যে শাখা উত্তর ভারতে এসেছিল তারাই পূর্ববর্তী অধিবাসী নিগ্রদের সঙ্গে মিলে অষ্ট্রিক জাতির সৃষ্টি করে।ভারতে এখন যে সব ভাষা বংশের মানুষ পাওয়া যায় তাদের মধ্যে অষ্ট্রিক বংশই প্রাচীনতম বংশ।

অষ্ট্রিক ভাষার প্রভাব:

বাংলা ভাষায় মুন্ডা ও কোল ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক দিক হলো-
১. বাংলা ভাষার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর দ্বি -স্বর ধ্বনি যেমন- ঐ,ঔ,অয় ,এই রয়েছে। কিন্তু সংস্কৃতে কেবল ঐ,ঔ দ্বি স্বর আছে।

২. বাংলায় যে কোন স্বরধ্বনি অনুনাসিক হতে পারে।মুন্ডা ভাষাতেও এই রূপ হয়ে থাকে। প্রচলিত বানানের সর্বদা প্রত্যক্ষ করা না গেলেও বাংলায় স্বরসঙ্গতি আছে। ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে, বাংলা ভাষা ও সাঁওতালি ভাষার মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।

৩. যুক্তব্যঞ্জন যেমন বাংলা ভাষাতেহয় না তেমনি মুন্ডা ভাষাতেও এ নিয়ম আছে।

৪. বাংলা ভাষাতে সংস্কৃতের তিনটি ‘শ’ কার উচ্চারিত হয়। মুন্ডা, সাঁওতালি, উর্দু ভাষার উচ্চারণ রীতিতেও ‘শ’ কার উচ্চারিত হয়।

৫. ‘ল’ থেকে ‘ন’ বর্ণের পরিবর্তন সাধারণত গ্রাম্য ও প্রাদেশিক বাংলা উপভাষাতেই ঘটে। ‍ একইভাবে ল ও ন এর স্থান পরিবর্তন মুন্ডা ভাষাতেও দেখা যায়।যেমন- নাল> লাল, নোঙ্গর>লাঙ্গল।

৬. মুন্ডা ভাষার মতোই বাংলাতেও উভয়লিঙ্গ বাচক শব্দের পূর্বে পুরুষবাচক শব্দ ব্যবহার করে লিঙ্গ নির্দেশ করা হয়। যেমন- বেটা ছেলে,মেয়ে ছেলে, পুরুষ মানুষ, মেয়ে মানুষ।

৭. বাংলায় বিশেষ্য ও সংখ্যাবাচক শব্দে সাথে টা, টি ব্যবহৃত হয়। একইভাবে সাঁওতাল, মুন্ডা ভাষাতেও টা টি ব্যবহৃত হয়। যেমন- বাংলায় ছেলেটি ,মুন্ডাতে- কোড়াদো।

দ্রাবিড় ভাষার প্রভাব:

বাংলা ভাষায় অ,এ, ক লেখার রীতিতে তামিল প্রভাব আছে। তবে অস্ট্রিক গোষ্ঠীর মত দ্রাবিড় ভাষার প্রভাব বাংলা ভাষায় ততখানি ব্যাপক ও প্রত্যক্ষ নয়। কেউ কেউ মনে করেন বাংলা ভাষাতে বিশেষণের তারতম্য বোঝাতে তরো ,তমো  প্রয়োগ না করে ভালো ,আরো ভালো  শব্দ ব্যবহার করার  প্রবণতার মধ্যে দ্রাবিড় প্রভাব রয়েছে। বাংলা ভাষায় আদ্য স্বরের শ্বাসাঘাতের  রীতি দ্রাবিড় থেকে আসা। এমনকি বাংলা স্বরসঙ্গতিও দ্রাবিড় প্রভাব জাত। ক্রিয়াপদের উহ্যতা বাংলায় এসেছে দ্রাবিড় ভাষা থেকে।অনুকার শব্দ বা দ্বিরুক্ত শব্দের দ্রাবিড় ভাষার প্রভাব রয়েছে।শব,অর্পণ,কপল,তুলসী,খল,দন্ত শব্দগুলো দ্রাবিড় ভাষা থেকে সংস্কৃত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে।

1 thought on “বাংলা ভাষায় অনার্য ভাষার প্রভাব সংক্ষেপে লেখ”

  1. Pingback: বাংলা ভাষার ইতিহাস ও ব্যবহারিক বাংলা সাজেসন্স | Cholo Shekhe

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top