বাক্য কাকে বলে ? একটি সার্থক বাক্যের গুণ বা বৈশিষ্ট্য আলােচনা কর।
✍✍ বাক্য কাকে বলে ? একটি সার্থক বাক্যের গুণ বা বৈশিষ্ট্য আলােচনা কর।
মানুষের মনে ভাব প্রকাশের মাধ্যম হলাে ভাষা। ভাষার মূল উপকরণ বাক্য এবং বাক্যের মৌলিক উপাদান শব্দ। সুবিন্যাস্ত এবং অর্থপূর্ণ বাক্য ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ ভাব বিনিময় করে থাকে। বাক্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পদ দ্বারা মিলিত ভাবে একটি অখণ্ড ভাব পূর্ণরূপে প্রকাশিত হলে তবেই তাকে বাক্য বলে।
☞ ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ্ বলেছেন- “একটি সম্পূর্ণ মনােভাব যে পদের দ্বারা প্রকাশ করা যায় ,তাহাদের সমষ্টিকে বাক্য বলে”
☞ ড. এনামুল হক বলেছেন – “সুবিন্যাস্ত পদসমষ্টি দ্বারা যদি বক্তার পুরােপুরি আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পায়, তবে ঐ পদ সমষ্টিকে বাক্য নামে অভিহিত করা যাবে”।
☞ ভাষাবিদ ড. সুনীতিকুমার চট্টেঅপাধ্যায় এর মতে – “কোনাে ভাষায় যে উক্তির সার্থকতা আছে এবং গঠনের দিক হইতে যাহা স্বয়ংসম্পূর্ণ, সেইরূপ একক উক্তিকে ব্যাকরণে বাক্য বলা হয়।”
ভাষার বিচারে বাক্যের নিম্নলিখিত তিনটি গুণ থাকা চাই – (ক) আকাঙ্ক্ষা (খ) আসত্তি (গ) যােগ্যতা
✔ (ক) আকাক্ষা :- বাক্যের অর্থ পরিষ্কার ভাবে বােঝার জন্য এক পদের পর অন্য পদ শােনার যে ইচ্ছা তা-ই আকাঙ্ক্ষা। যেমন- কলেজে আজ– এটুকু বললে বাক্য সম্পূর্ণ মনােভাব প্রকাশ করে না, আরও কিছু শােনার ইচ্ছা থাকে। কিন্তু যদি বলা হয় ‘আজ কলেজে যাব না’ তবেই এ বাক্যে আকাক্ষা নিবৃত্তি হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠন হয়েছে।
✔ (খ) আসত্তি :- মনােভাব প্রকাশের জন্য বাক্যে শব্দগুলাে এমন ভাবে পর পর সাজাতে হবে যাতে মনােভাব প্রকাশ বাধাগ্রস্ত না হয়। বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদবিন্যাসই অসত্তি। যেমন : ‘হয় হতে মেঘ বৃষ্টি’ এখানে পদ সন্নিবেশিত ঠিকভাবে না হওয়ায় শব্দগুলাের অন্তর্নিহিত ভাবটি যথাযথ প্রকাশ হয় নি। তাই এটিকে বাক্য বলা যাবে না। মনােভাব পূর্ণ ভাবে প্রকাশ করার জন্য পদগুলােকে নিম্নলিখিত ভাবে সাজাতে হবে।- ‘মেঘ হতে বৃষ্টি হয‘ এ বাক্যটি আসত্তিগুণ সম্পন্ন।
✔ (গ) যােগ্যতা :- বাক্যস্থিত পদসমূহের অন্তর্গত এবং ভাবগত মিলবন্ধনের নাম যােগ্যতা। যেমন – ‘হাতি আকাশে উড়ে যায়’ এ বাক্যটি ভাব প্রকাশে যােগ্যতা হারিয়েছে কারণ হাতি আকাশে উড়তে পারে না। যদি বলা হয় – পাখি আকাশে উড়ে যায় তবে একটি যােগ্যতা সম্পন্ন বাক্য হবে কারণ পদের অন্তর্গত এবং ভাবগত সমন্বয় রয়েছে।