সাহিত্য জাতির দর্পণ স্বরূপ।
সাহিত্য জাতির দর্পণ স্বরূপ।
মূলভাব: মানবমনের বিচিত্র অনুভূতির সাথে সমাজ ও বাস্তব জীবনের নানা খণ্ডচিত্র মিলে রচিত হয় সাহিত্য। সাহিত্যের মধ্য দিয়েই একটি জাতিকে চেনা যায়। যে কোনাে জাতির আশা-আকাঙক্ষা ও চেতনা প্রতিফলিত হয় তার সাহিত্যে।
সম্প্রসারিত-ভাব : মানুষের দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্মনীতি, অনুরাগ, বিরাগ, আশা, নৈরাশ্য, তার অন্তরের সত্য ও স্বপ্ন— এসব নিয়েই রচিত হয় সাহিত্য। দর্পণে যেমন আমাদের পূর্ণাঙ্গ মুখচ্ছবি প্রতিফলিত হয়, তেমনি সাহিত্যেও একটি জাতির পরিপূর্ণ অবয়ব পাওয়া যায়। যে জাতি যত উন্নত, সে জাতির সাহিত্য তত সমৃদ্ধ। সাহিত্যের মাধ্যমেই একটি জাতির অবস্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। কেননা, প্রত্যেক জাতির কবি, সাহিত্যিকগণই তাদের লেখনীর নিপুণ আঁচড়ে সে জাতির নিজস্ব জীবনধারা ও বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তােলেন। জাতীয় জীবনে আমাদের উত্থান-পতন, প্রেম-ভালােবাসা, সুখ-দুঃখের কাহিনি স্বীয় বৈশিষ্ট্যে সাহিত্যে ধরা পড়ে। জাতির অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য সাহিত্যের বিষয়বস্তু হিসেবে গৃহীত হয়। জাতি হিসেবে কোনাে দেশের মানুষ বর্তমান বিশ্বে কতটা অগ্রসর তা সে দেশের সাহিত্য পাঠে সহজেই জানা যায়। যেমন, গ্রিক সাহিত্য পাঠে আমরা প্রাচীন গ্রিকদের জীবন -যাপন, সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি। ফারসি সাহিত্যের মাধ্যমে জানতে পারি প্রাচীন পারস্যের ইতিহাস, তদ্রুপ বাঙালি জাতি হিসেবে সমগ্র পৃথিবীতে আমাদের যে পরিচিতি তার মূলে রয়েছে আমাদের বাংলা সাহিত্য। আমাদের হাজার বছরের সাহিত্য ভাণ্ডারের স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়ে আছে অনেক কবিতা, গান, গল্প ও উপন্যাস। এসব কালজয়ী সাহিত্য কীর্তির দিকে তাকালে আমরা আমাদের জাতিসত্তাকে খুঁজে পাই। আবহমান বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি সমৃদ্ধ আমাদের সাহিত্যই আমাদের পরিচয় বহন করছে। আমাদের জাতীয় উন্নতির মাপকাঠিও এ সাহিত্য। তাই কোনাে জাতিকে জানতে হলে সে জাতির সাহিত্যের সাথে পরিচিত হতে হবে।
মন্তব্য : সাহিত্য কেবল কবির কবিতা ও সাহিত্যিকের রচনা নয়, এটি একটি জাতির সংস্কৃতিকেও ধারণ করে।