বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে? শ্রেণি বিভাগসহ আলোচনা কর।

Spread the love

বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে? শ্রেণি বিভাগসহ আলোচনা কর।

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোনো পদকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে যেমন- দশ অনন যার= দশানন
এখানে দশ বা অনন পদের অর্থ বোঝায়নি এখানে লঙ্কার রাজা রাবণের দশটি মাথা থাকায় তার নাম দশানন তাই এখানে রাবণকে বুঝিয়েছে।

জ্ঞাতব্য
ক. ‘সহ’ বা ‘সহিত’ শব্দের সঙ্গে অন্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে ‘সহ’ ও ‘সহিত’ এর স্থানে ‘স’ হয়।
যেমন- সহ উদর যার= সহোদর, জলের সহিত বর্তমান= সজল, দর্পের সহিত বর্তমান= সদর্প।
খ. মাতৃ, পত্নী, পুত্র, স্ত্রী শব্দ থাকলে এ শব্দগুলোর সঙ্গে ‘ক’ যুক্ত হয়।
যেমন- বিগত হয়েছে পত্নী যার= বিপত্নীক , পুত্র নেই যার= অপুত্রক, নদী মাতা যার= নদীমাতৃক।
গ. ‘অক্ষি’ শব্দের স্থলে ‘অক্ষ’ এবং ‘নাভি’ শব্দ স্থলে ‘নাভ’ হয়।
যেমন- ঊর্ণ নাভিতে যার= ঊর্ণনাভ, কমলের মত অক্ষি যার= কমলাক্ষ

বহুব্রীহি সমাস আট প্রকার।
১. সমানাধিকরণ বহুব্রীহি- ব্যাসবাক্যের শেষে যার হবে
যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ বিশেষ্য ও পরপদ বিশেষণ অথবা পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হয় তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে
বিশেষ্য + বিশেষণ= কান কাটা যার- কানকাটা, সঙ্গীত প্রিয় যার- সঙ্গীতপ্রিয়
বিশেষণ+ বিশেষ্য= গৌর অঙ্গ যার- গৌরাঙ্গ, অল্প বয়স যার- অল্পবয়সী

২. ব্যধিকরণ বহুব্রীহি- ব্যাসবাক্যের শেষে যার হবে
যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ বিশেষ্য হয় তাকে ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে।
বীণা পাণিতে (হাতে) যার= বীণাপাণি, পদ্ম নাভিতে যার= পদ্মনাভ, আশীতে (দাঁত) বিষ যার= আশীবিষ।

৩. মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি- ব্যাসবাক্যের শেষে যার হবে
ব্যাসবাক্যের মধ্যপদ বা অখ্যানমূলক মধ্যপদ লোপ পেয়ে যে বহুব্রীহি সমাস হয় তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন- গজ আনন যার= গজানন, মীনের মত অক্ষী যার= মীনাক্ষী, মেঘের মত বরণ যার= মেঘবরণ।

৪. প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি- যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ, এ,ও ইত্যাদি প্রত্যয়যুক্ত থাকে তাকে প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন- ঘরের দিকে মুখ যার= ঘরমুখো, দুই দিকে টান যার= দোটানা, এক দিকে ঘর যার= একঘোরে।

৫. ব্যতিহার বহুব্রীহি- ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। যে বহুব্রীহি সমাসে দুটি একরূপ শব্দ দিয়ে এক জাতীয় কাজ বোঝায় তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি বলে। সমস্তপদ কিছুটা দ্বিরুক্ত শব্দ হয়।
যেমন- কোলে কোলে যে মিলন= কোলাকুলি, হাতে হাতে যে লড়াই- হাতাহাতি, হেসে হেসে যে আলাপ- হাসাহাসি।

৬. নঞর্থক বহুব্রীহি- নঞর্থক অব্যয় পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের বহুব্রীহি সমাস হয়। অথবা বিশেষ্য পদের আগে নঞ বা না-বোধক অব্যয় যোগ করে বহুব্রীহি সমাস হলে তাকে নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস হয়। নঞ বহুব্রীহি সমাসে সাধিত পদটি বিশেষণ হয়।
যেমন- নেই ইমান যার= বেইমান, নেই ভুল যার= নির্ভুল, নেই অন্ত যার= নিরন্তর।

৭. সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি- পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হলে এবং সমস্ত পদটি বিশেষণ বোঝালে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলে। এ সমাসের সমস্ত পদে আ,ই বা ঈ যুক্ত হয়।
যেমন- দশ গজ পরিমাণ যার= দশগজি
তিন পায়া যায়- তেপায়া
চৌ চাল যে ঘরের- চৌচালা।

৮. অলুক বহুব্রীহি- পূর্বপদের বিভক্তি লোপ না পেয়ে যে বহুব্রীহি সমাস হয় তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে।
যেমন- মাথায় ছাতা যার= মাথায়-ছাতা
হাতে ঘড়ি যার= হাতে-ঘড়ি
গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে= গায়ে -হলুদ।

নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি
যে বহুব্রীহি সমাস কোনো নিয়ম মানে না তাকে নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি সমাস বলে।
যেমন- পণ্ডিত হয়েও যে মূর্খ= পণ্ডিতমূর্খ
নরাকার যে পশু= নরপশু
অন্তর্গত অপ (পানি) যার= অন্তরীপ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top