ইন্টারনেট বা ইন্টারনেট ও বর্তমান বাংলাদেশ প্রবন্ধ রচনা
পৃথিবীর নব নব আবিষ্কার সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আধুনিক সময় বিজ্ঞানের বিচিত্র আবিষ্কারের মধ্যে ইন্টারনেট সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে। আধুনিক বিশ্বকে মানুষ হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে ইন্টারনেটের কল্যাণে। আজকের দিনে ইন্টারনেট ব্যতীত একটি দিন অতিক্রম করতে পারি না। ইন্টারনেট সুবিধার মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ মুহূর্তের মধ্যে একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারছে।
বিষয়বস্তু:
- ভূমিকা
- ইন্টারনেট কী
- ইন্টারনেট ব্যবহারের অনুষঙ্গ
- ইন্টারনেটের কর্মপদ্ধতি
- ইন্টারনেট এর শ্রেণীবিভাগ
- ইন্টারনেট ব্যবহারের ইতিহাস
- ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল
- তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেট
- যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ইন্টারনেটের ব্যবহার
- বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার
- বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবাহ ও ইন্টারনেট
- ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি করার উপায়
- ইন্টারনেটের অসুবিধা
- উপসংহার
ভূমিকা: পৃথিবীর নব নব আবিষ্কার সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আধুনিক সময় বিজ্ঞানের বিচিত্র আবিষ্কারের মধ্যে ইন্টারনেট সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে। আধুনিক বিশ্বকে মানুষ হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে ইন্টারনেটের কল্যাণে। আজকের দিনে ইন্টারনেট ব্যতীত একটি দিন অতিক্রম করতে পারি না। ইন্টারনেট সুবিধার মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ মুহূর্তের মধ্যে একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারছে। ইন্টারনেটের কারণে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মানুষের জীবনযাত্রা হয়েছে সহজ । দূরত্ব এবং সময় উভয় কমিয়ে এনেছে ইন্টারনেট প্রযুক্তি। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইন্টারনেটের গুরুত্ব দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশে ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উত্তরোত্তর উন্নতি সাধন করে চলছে।
ইন্টারনেট কী: আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনাকে সংক্ষেপে বলা হয় ইন্টারনেট।বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত শব্দ ইন্টারনেট। আন্তর্জাতিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সেবা ও ইন্টারনেট বলা হয়। পৃথিবীর সমগ্র কম্পিউটারে একটি পদ্ধতির মধ্যে নিয়ে আসাকে ইন্টারনেট ব্যবস্থা বলা হয়ে থাকে।একটি কম্পিউটারের সঙ্গে আরেকটি কম্পিউটারে সংযোগ স্থাপন করা হয় ইন্টারনেট এর মূল কাজ। এভাবে দেশের তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে অন্য আরেকটি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি সংযুক্ত হয় ইন্টারনেট ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের মানুষ একে অন্যের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারের মাধ্যমে। কথা বলা, ছবি আদান প্রদান, গবেষণা পত্র জমা, ব্যবসায়িক কাগজপত্র, লেখাপড়া সহ বিচিত্র সেবা পাওয়া যায় ইন্টারনেটের কল্যাণে। পৃথিবীর সমস্ত কম্পিউটার, আধুনিক মানের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ প্রযুক্তিকে একত্রিত করেছে ইন্টারনেট পরিষেবা।জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে ইন্টারনেট কম্পিউটার, ও মোবাইল ফোন যুক্ত করে রাখে।বিশ্বের সমগ্র মানুষকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে ইন্টারনেট ব্যবস্থা ।
ইন্টারনেট ব্যবহারের অনুষঙ্গ: ইন্টারনেট সেবা ব্যতীত আজকের পৃথিবী মুহূর্তের মধ্যেই অচল হয়ে পড়বে। ইন্টারনেট সুবিধা গ্রহণের জন্য সবচেয়ে প্রথমেই প্রয়োজন একটি কম্পিউটার, ল্যাপটপ, বা মোবাইল।নেটওয়ার্ক ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন একটি রাউটার। মোবাইলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে মোবাইল টাওয়ার এবং প্রয়োজনীয় মেগাবাইট মোবাইল কোম্পানির কাছ থেকে কিনে নিতে হয় যার নির্দিষ্ট পরিমাণ ও ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে।তবে সরকারি টেলিফোন সংযোগ লাইন যদি থাকে তাহলে রাউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায়। মডেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রচলন ছিল। ইন্টারনেট সেবা সহজ করার জন্য বিজ্ঞান নতুন নতুন আবিষ্কার করে যাচ্ছে। এই সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারে দেশ ও বিশ্বের বহুমুখী উন্নয়ন সাধিত হবে।
ইন্টারনেট এর শ্রেণীবিভাগ: ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন রকম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রযুক্তিগত ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ইন্টারনেটের চারটি শ্রেণী বিভাজন করা যায়, যথা- অপটিক্যাল ফাইবার, ওয়াইফাই বা তারবিহীন সংযোগ, টেলিফোন লাইন, কম্পিউটার মডেম। ক্ষুদ্র ব্যবহারকারীরা অপটিক্যাল ফাইবার বা ফাইবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। এই পদ্ধতিকে ফাইবার টু হোম পদ্ধতি বলা হয়। মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার জন্য ওয়াইফাই বা তারবিহীন পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়। মাঝারি বা বৃহৎ ব্যবহারকারীরা গিগাবাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে, এই শ্রেনীর ব্যবহারকারীদের উচ্চগতিসম্পন্ন নেটওয়ার্ক এর প্রয়োজন হয়। মডেম ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণত একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়।
ইন্টারনেট ব্যবহারের ইতিহাস: জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত বিশ্ব নিজের দেশের তথ্য সংরক্ষণ এবং গোপন যোগাযোগ রক্ষার জন্য প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৯৬০ সালে আমেরিকার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টা চালায়। বিশেষত পৃথিবীর দুটি বৃহৎ পারমাণবিক শক্তিধর দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। ১৯৬৯ সালে আমেরিকার বিজ্ঞানীরা টেলিফোনের বিকল্প হিসেবে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে এবং এর নাম তখন ছিল MILNET ।এই ব্যবস্থাটিকে আরও বেশি কার্যকর এবং বহুমুখী করার জন্য আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা শুরু করে। ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের জন্য ‘নেস্ফেনেট’ নামের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করে। এটির উপযোগিতা এত বেশি ছিল অল্প সময়ের মধ্যেই আমেরিকা ছাড়িয়ে পৃথিবীর অনেক দেশেই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ১৯৯৩ সালে ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে বাণিজ্যিকভাবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং একটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়। কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিগত বিষয় সমূহ যুগোপযোগী করার মাধ্যমে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষকে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। সামরিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের জন্য ইন্টারনেট উদ্ভাবনের প্রাথমিক চেষ্টা হলেও বর্তমানে তা ব্যবহার হচ্ছে বহুমাত্রিক কাজে।
ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল: ইন্টারনেট ব্যবহার ছাড়া আজকের পৃথিবী কল্পনাই করা যাবে না। প্রতিদিনকার জীবনের সঙ্গে ইন্টারনেটের কোন না কোন সম্পর্ক রয়েছে।প্রযুক্তিগত ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের জীবনে বৃহৎ পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেট বিশেষ ভূমিকা রাখতে। যে কোন বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ হলে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা সে বিষয়ে সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া ও গবেষণার কাজে ইন্টারনেট পরিষেবা খুব কার্যকরী। দেশে বা কোনো অঞ্চলে বিশেষ কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আসতে না পারলে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ই-মেইলের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। এক দেশ থেকে আরেক দেশে গবেষণাপত্র প্রেরণের জন্য সবচেয়ে সহজ মাধ্যম এখন ইন্টারনেট।সামরিক ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার একটি দেশকে শক্তিশালী করে তোলে। বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য আগাম তথ্য লাভের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট যেমন কাজে লাগে তেমনি ভাবে নিজ দেশের গোপন যোগাযোগ রক্ষার জন্য ইন্টারনেট কার্যকরী। বাণিজ্য ব্যবস্থা এখন পুরোপুরি ইন্টারনেট নির্ভর। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক দেশ থেকে অন্য দেশের ক্রয়াদেশ প্রেরণ, কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ, চাহিদামত পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে কি না সেটা জানা যায় সহজেই। বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দোকান সমূহ পণ্যের মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে একজন মালিক একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহজে চালাতে পারে। দূর দূরান্তে বসে নিজের ব্যবসার সমস্ত হিসাব-নিকাশ সহজেই মিলিয়ে নেওয়া যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলা, ছবি প্রেরণ এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে ছবি দেখার মত সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে ইন্টারনেট। দেশের অভ্যন্তরে জরুরী সেবা লাভের জন্য বিশেষ নম্বরে ফোন করে বা তথ্যপাঠানোর ব্যবস্থা করা যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। পুলিশ, ডাক্তার, ফায়ার সার্ভিস,ও আইনজীবীর পরামর্শ লাভের জন্য ইন্টারনেট ব্যবস্থা বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। সংবাদ পরিবেশনের জন্য ইন্টারনেট ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম গড়ে উঠেছে। পৃথিবীর যেকোন সংবাদ মুহুর্তের মধ্যে আমরা জানতে পারি ইন্টারনেটের মাধ্যমে।বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গান শোনা, কবিতা আবৃত্তি শোনা, সিনেমা দেখার সহজ মাধ্যম ইন্টারনেট। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্যবহার করা যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। অফিস ম্যানেজমেন্ট এর পুরো দায়িত্ব এখন অনলাইন নির্ভর। হাজার হাজার ফাইল সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় ফাইল আমরা খুঁজে পেতে পারি ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে।অনলাইনে কেনাবেচার জন্য ইন্টারনেটের বিকল্প নেই। ঘরে বসেই পণ্য পছন্দ করে যেমন কিনতে পারছি তেমনি ভাবে কোনো পণ্য বিক্রি করার প্রয়োজন হলেও রয়েছে তার প্ল্যাটফর্ম ।বাস, প্লেন,ট্রেনের টিকিটসহ হোটেল বুকিং এর মত কাজ দূর দূরান্তের বসে সেরে ফেলা যায় ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে।ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় গতি এসেছে এবং আর্থিক লেনদেন সহজ হয়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে একই সাথে কমেছে চেক জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা। এক মুহূর্তের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকলে পৃথিবীর আর্থিক ক্ষতি কি পরিমাণ হবে তা অকল্পনীয় এবং অপূরণীয় । সর্বোপরি ইন্টারনেট বর্তমান বিশ্বের অন্যতম প্রয়োজনীয় বিষয়।
তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেট: তথ্য প্রযুক্তি সেবা ব্যতীত আজকের বিশ্ব কোনভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তথ্যপ্রযুক্তি। ই-মেইল, মেসেজ ,ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, টেলিকনফারেন্স সহ নানান ধরনের সেবা লাভের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে । তথ্য সংরক্ষণের জন্য আমাদের নির্ভর করতে হয় ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনার ওপর। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা একে অপরের সঙ্গে যেমন যোগাযোগ রক্ষা করতে পারি তেমনি তথ্যের আদান-প্রদান করতে পারি। মানুষের সঙ্গে মানুষের ভাবের আদান-প্রদান, আবেগ-অনুভূতি সকল কিছুই বিনিময় হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। মানুষের কাজকে সহজ করার জন্য তথ্য প্রযুক্তি সেবার ব্যবহার বাড়ছে ফলে এর উপরে মানুষের নির্ভরতা দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছে। মানুষের ওপর চাপ কমানোর জন্য ইন্টারনেট ব্যবস্থা বেশ উপযোগী।তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে ইন্টারনেট ব্যবহৃত হলেও মানুষকে ইন্টারনেট এর থেকে আরও বেশি গতিশীল হতে হবে, না হলে ইন্টারনেট এক সময় মানুষকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ইন্টারনেটের ব্যবহার: সমগ্র পৃথিবীকে আজ একত্রিত করেছে ইন্টারনেট।বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ব্যতীত আমরা কোনোভাবেই উন্নতির পথে অগ্রসর হতে পারবে না।তথ্যপ্রযুক্তি সেবা সহজিকরণ এর মাধ্যমে একটি দেশের সার্বিক সেবা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান ও এক দেশের সাথে অন্য দেশের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য আজকের বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবস্থার বিকল্প কিছু নেই। উন্নত বিশ্বে প্রায় ৮০% মানুষ তথ্য প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে থাকে। সকল ক্ষেত্রে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য একটি নির্দিষ্ট ওয়েব এড্রেস ব্যবহারের মাধ্যমে সেটি সম্ভব হয়। যেকোনো প্রতিষ্ঠান নিজের তথ্য যেমন সংরক্ষণ করতে পারে তেমনি অন্য প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সঙ্গে সহজে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। বর্তমান সময় তথ্য প্রবাহ সহজ করা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার: বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করতে হলে কম্পিউটার ব্যবহারের সময় সম্পর্কে ধারণা লাভ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে ষাটের দশকে কম্পিউটার ব্যবহারের যাত্রা শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন অফিস-আদালতে টাইপ রাইটারের পরিবর্তে কম্পিউটার টাইপ শুরু করা হয়।১৯৯৩ সালের নভেম্বর মাসের ১১ তারিখ বাংলাদেশে ইন্টারনেট প্রথম ব্যবহার হয়। প্রাথমিক ভাবে কয়েকটি অফিসের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হতো। off-line প্রযুক্তির মাধ্যমে ইন্টারনেটের যাত্রা শুরু হলেও ১৯৯৬ সালে ভিএসএটি ( VSAT) এর মাধ্যমে প্রথম অনলাইন ইন্টারনেট চালু করা হয়। বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা বিস্তার ঘটে আইএসএন (ISN) নামের আইএসপি (ISP) এর মাধ্যমে। শুরুতে ব্যবস্থাটি বিটিসিএলের( BTCL) হাতে সীমাবদ্ধ ছিল অর্থাৎ সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যবস্থার মধ্যে ছিল।পরবর্তী সময় দেশের ও দেশের বাইরের বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশে ইন্টারনেট সুবিধা নিয়ে এসেছে।
বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবাহ ও ইন্টারনেট: বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবাহ বিশ্লেষণ করতে হলে কোন ভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা কে বাদ দেওয়া যাবে না। বিশেষত বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম নতুন নতুন যে ব্যবসা ক্ষেত্র তৈরী করছে তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে রয়েছে ইন্টারনেট। গত দুই দশকে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লব থেকে বাংলাদেশে সফলতার পথ খুঁজেছে। পৃথিবীর সাথে তাল মেলাতে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট বিশেষ ভূমিকা রাখে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইউনিয়ন পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবার আওতাধীন। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নিবন্ধন, চাকরির আবেদন, আমদানি রপ্তানি ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান, গবেষণা পত্র সংরক্ষণ, স্বাস্থ্য পরিষেবা, আর্থিক লেনদেন সকল কিছুই ইন্টারনেট নির্ভর।তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তি পরিষেবা কে অর্থনৈতিক প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহার করছে। ই-কমার্স, আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে তরুণ সমাজ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সন্তোষজনক অবদান রাখছে এবং দিনের পর দিন অর্থনীতিতে তাদের অবদান বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই দেশের যেকোন স্থানে বসে একজন যুবক সহজে টাকা আয় করতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি সকল সেবা অনলাইন ভিত্তিক হওয়াতে ইন্টারনেটের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি ভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে বেশ কিছু তরুণ স্বাবলম্বী হয়েছে। প্রযুক্তি সেবার অভাবনীয় এই মাধ্যমটিকে বাংলাদেশের মানুষ সহজে গ্রহণ করেছে ফলে এর সুবিধা এদেশের মানুষ ভোগ করছে যার ফলে আজ আমাদের দেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে।২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষ সরাসরি ইন্টারনেট ব্যবহারের সাথে যুক্ত থাকবে।
ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি করার উপায়: বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ইন্টারনেট সেবা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। পাঠ্যসূচিতে কম্পিউটার শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হলেও কম্পিউটারের ব্যবহারিক দিক এর উপর তুলনামূলকভাবে কম নজরদারি করা হয়। বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে তাই এর ব্যবহার বৃদ্ধি করার জন্য সরকারের প্রথম কাজ সহজ মূল্যে মানুষের কাছে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। শতভাগ বিদ্যুতায়ন এর মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপকরণের সহজ আমদানি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি কাজ অনলাইন ভিত্তিক করা গেলে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করতে মানুষ বাধ্য হবে। অল্প পুঁজির মাধ্যমে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে ঋণ ব্যবস্থা বা প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। যথাযথ সেবা প্রদানের মাধ্যমে মানুষের মাঝে আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে তবেই ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি করা সহজ হবে।
ইন্টারনেটের অসুবিধা: প্রতিটি জিনিসের ভালো যেমন আছে তেমনি তার খারাপ দিকও আছে।ব্যবহারকারী ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন জিনিস গ্রহণ করবে সেটি তার ওপর নির্ভর করবে। তরুণ সমাজের আগ্রহের স্থান থাকে পর্নোগ্রাফি। অনলাইন জুয়া, অর্থের বিনিময়ে গেম খেলা, অপরিচিত নারী বা পুরুষের সঙ্গে সরল বিশ্বাসে সম্পর্কে জড়ানো, গুজব বিস্তার সহ নানা ধরনের খারাপ পথের কানাগলি এই ইন্টারনেট। ভাইরাস সৃষ্টির মাধ্যমে কম্পিউটারের প্রোগ্রাম ও তথ্য মুছে ফেলার মতো কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ফলে প্রতি বছর লাখ লাখ কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যে কোন মানুষকে লক্ষ্য করে খারাপ মন্তব্য প্রকাশের মাধ্যমে ব্যক্তির সম্মান সহজেই ক্ষুন্ন করা যায়। ইন্টারনেট মানুষের জীবনে যেমন স্বস্তি এনেছে তেমনি কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা মানুষকে বিব্রত কর অবস্থায় পড়তে বাধ্য করছে তবুও আজকের পৃথিবীতে ইন্টারনেট ছাড়া একটি দিনও কল্পনা করা সম্ভব নয়।
উপসংহার: ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার সভ্যতার পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ইন্টারনেট। সময়ের সাথে সাথে ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে যার উপর ভিত্তি করে মানুষের জীবনযাত্রায় এসেছে পরিবর্তন।দেশের এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে ইন্টারনেটের ব্যবহার করা হচ্ছে না। সকল কঠিন কাজ অতি সহজ করে মানুষের কাছে নিয়ে আসছে ইন্টারনেট পরিষেবা।তৃতীয় বিশ্বকে উন্নত বিশ্বে পরিণত করতে হলে ইন্টারনেট ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা বাণিজ্য, চিকিৎসা সেবা যোগাযোগ প্রযুক্তি ও ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদানের জন্য সবথেকে জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ইন্টারনেট। ইন্টারনেট আবিষ্কার পৃথিবীতে মহা বিপ্লবের সৃষ্টি করেছে।